বহির্বিশ্বের সাথে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সহজতর করতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৬ টি মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬ স্থলবন্দরের সাথে এসব মহাসড়ক সংযুক্ত হবে। প্রস্তাবিত মহাসড়কের ৩ টি দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ খুলনায়, বাকি ৩ টি উত্তরাঞ্চলে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ‘টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্স ফর রোড ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ৬ টি মহাসড়কে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের তিনটির দৈর্ঘ্য খুলনা-ডুমুরিয়া-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ৫৫.৪ কি.মি. কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ, ফকিরহাট-কাটাখালি মহাসড়কে ৭৩ কি.মি. ও বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কে ১০৭ কি.মি.। উত্তরাঞ্চলের তিনটির দৈর্ঘ্য রংপুর-জলঢাকা-বুড়িমাড়ি স্থলবন্দর মহাসড়ক ১০২ কি.মি. জলঢাকা-দেবিগঞ্জ-বোদা-পঞ্চগড়-বাংলাবান্দা স্থলবন্দর মহাসড়ক ১২০ কি.মি. ও রংপুর-কুড়িগ্রাম-বুরুংঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর মহাসড়ক ১০০ কি.মি.। এই মহাসড়কগুলো সাতক্ষীরার ভোমরা, যশোরের বেনাপোল, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুড়িগ্রামের সোনাহাট ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
এই ৬ মহাসড়ক ৬ লেন হলে দক্ষিণবঙ্গের সাথে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগেও নতুন মাত্রা যোগ হবে। ৬টি স্থলবন্দরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হওয়ায় বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে একবারে সহজতর।
দক্ষিণাঞ্চলের তিনটির মধ্যে প্রথমে খুলনা-ডুমুরিয়া-সাতক্ষীরার ৫৫.৪ কি.মি. মহাসড়কের সার্ভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এলইএ(লিয়া) অ্যাসোসিয়েটস সাউথ এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, ভারত ও রিপাবলিক অব কোরিয়া ইয়ুশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এর সাথে এবং আমাদের দেশের ডেভ কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ডেভকন), ডিজাইন প্লানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ডিপিএম), এবং দেশ উপদেশ লিমিটেড (ডিইউএল), (সংক্ষেপে লাসা ইয়ুশিন জেভি, ডেভকন, ডিপিএম এবং ডিইউএল) এর সাথে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব ফার্ম ৬ মহাসড়কের সারফেস কন্ডিশন, ভিডিওগ্রাফি সার্ভে, টপোগ্রাফিক সার্ভে, মৃত্তিকাজরিপসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করছে।
বর্তমানে খুলনা-ডুমুরিয়া-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অধিকাংশ জায়গায় ১১০ ফুট চওড়া রয়েছে। সার্ভের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেভ কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ডেভকন) কর্মকর্তারা ৬ লেন সম্প্রসারণে ফাঁকা জায়গায় ২২০ ফুট এবং বাজার এলাকায় ১৫০ ফুট চওড়া করার প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া চুকনগর বাজারের আগে থেকে পাতোখোলা বিলের মধ্য দিয়ে বাইপাস সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা রয়েছে।
এদিকে গত ১৫ নভেম্বর শনিবার ডুমুরিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে সার্ভে টিম এক মতবিনিময় সভা করে। সেখানে ব্যবসায়িরা ডুমুরিয়া বাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় রাস্তা চওড়া ১২০ ফুটের ভেতর রাখার প্রস্তাব করেন। ওই সার্ভে টিমে ছিলেন মিজানুর রহমান ও মালেকা রহমান। তাদের বক্তব্য “আমরা সার্ভে করছি এসব মহাসড়ক ৬ লেন করতে কত জমি অধিগ্রহণ করা লাগতে পারে, কি পরিমাণ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে এবং ফ্লাইওভার করা লাগবে কিনা।”
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক খুলনা গেজেটকে বলেন, “এসব মহাসড়ক ৬ লেন হলে এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সড়ক সার্ভে ফার্ম রাস্তার বর্তমান অবস্থা এবং ৬ লেন করতে কি করণীয় সে সম্পর্কে সার্ভে করে নকশা তৈরি করে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়ার কথা।”
খুলনাঞ্চলের সকলের দাবি সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরিতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি প্রশংসনীয়। এর ফলে বিশ্বের নানা দেশের সাথে অর্থনৈতিক সর্ম্পক আরও উন্নত হবে।
এ প্রকল্পের টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহারিয়ার রহমান খান বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এসব সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার কাজের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গাড়ি মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে না। ফলে মৃত্যুঝুঁকি একেবারে কমে যাবে।”
প্রকল্প পরিচালক সাব্বীর হাসান খান বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চলাচল রোধ, রোড মার্কিং, টাইম সিগনালের পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারের ওপর দিয়ে ওভারব্রিজ নির্মাণ, বাইপাস সড়ক তৈরির ডিজাইনের কাজ চলছে। আগামী বছর ডিজাইনের কাজ শেষ হবে। এখনও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে অনেক সময় লাগবে বলে তিনি জানান।”
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, “খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সার্ভে করতে ডেভকন এন্টিগাল কনসালটিং লিমিটেডকে সাব লিজ দিয়েছেন। ওই ফার্মের কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দিয়ে অনেকের কাছ থেকে ছবি এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়েছেন। দু’জন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের কাছে যেয়ে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন।”
ওই সংস্থায় কর্মরত এবং এ মহাসড়কের সার্ভে কাজে নিয়োজিত এম এইচ অনিক খুলনা গেজেটকে বলেন, “আমরা শুধু প্রাথমিক সার্ভে কাজ সম্পন্ন করেছি। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবে কাজ হবে।”
অনেকের ছবি এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ড কেন নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “যাদের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা করা হচ্ছে তাদেরটা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের ঠিকানা এবং নাম সঠিক রাখার জন্য এসব নেওয়া হয়েছে।”
এ ব্যাপারে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন, “তাদের ছবি ও এনআইডি নেওয়ার কথা নয়। সার্ভের পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব করার কথা। বিষয়টি অনেকে তাদেরকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে খোজঁ খবর নেওয়া হচ্ছে।”
খুলনা গেজেট/এনএম

