শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সাবেক মেয়র খালেক ও খুবির সাবেক দুই ভিসি’র দুর্নীতি তদন্তে শম্বুুকগতি

মোহাম্মদ মিলন

খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন ও অধ্যাপক ড. ফায়েক উজ্জামানের অনিয়মের তদন্ত ১০ মাসেও শেষ হয়নি। খালেকের দুর্নীতি তদন্তে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি দুদকের খুলনার উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। দুই উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তে টিম গঠন করা হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে তাদের সমস্ত অনিয়মের নথি তলব করা হয়। নথি পাওয়ার ১০ মাস অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।

কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, “সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঝড় তুলতেন তালুকদার আবদুল খালেক। কিন্তু সততার এই মুখোশের আড়ালে গত ১৫ বছরে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এর বড় অংশই করেছেন মেয়র পদকে কাজে লাগিয়ে।”

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইন লঙ্ঘন করে অন্যের লাইসেন্সে নিজেই ঠিকাদারি করতেন খালেক। মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স ও মেসার্স তাজুল ইসলাম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৬০ কোটি টাকার কাজ করেছেন গত কয়েক বছরে। ঠিকাদার এইচ এম সেলিম (সেলিম হুজুর) এসব কাজ দেখাশোনা করতেন। এর বাইরে ৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে আরও প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বড় ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন।

দুদক থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি দুদকের খুলনার উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ২৩ জানুয়ারি থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। গত ১১ মাসে মাত্র ৩টি সড়ক মেপে দেখেছেন তারা। বাকি কাজ মাঝপথে থমকে গেছে। এতে অন্যান্য ঠিকাদাররাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন তার তিন বছর দায়িত্বে থাকাকালে নিয়োগ, পদোন্নতি আপগ্রেডেশন দিয়েছেন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এসব প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে ৪ সদস্যের টিম গঠন করা হয়। এছাড়া উন্নয়ন কাজের বিষয়েও পৃথক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই তদন্ত কার্যক্রমও থমকে আছে।

দুদক থেকে জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য দায়িত্ব পালনকালে হত্যা মামলায় সাজা পাওয়ার পরও পদোন্নতি দিয়ে অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক করা হয় মুজিবুর রহমানকে। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ ছিল। এছাড়া উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সঞ্জয় সাহাসহ প্রায় ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রকৌশলীকে অনিয়মের মাধ্যমে আপগ্রেডেশন দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতির নথি তলব করেছে দুদক।

এর বাইরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগেও প্রকৌশল শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও পৃথক অনুসন্ধান করছে দুদক। বিশেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান এন্ড সন্সের পাওয়া কাজের প্রক্রিয়া খুঁজতে চিঠি দেওয়া হয়। এসব তদন্তও গতিহীন।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামানের ১০ বছরে নিয়োগ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ জনের। অন্যদিকে অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের সময় নিয়োগ ও পদোন্নতি হয়েছে শতাধিক। অধিকাংশ নিয়োগেই ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। অবশ্য দুই উপাচার্য নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই উপাচার্যের দায়িত্বকালে নিয়োগ, পদোন্নতি, আপগ্রেডেশনের তথ্য চায় দুদক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত ১০ মাসে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি দুদক।

এ ব্যাপারে দুদকের খুলনার উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, “অনিয়মের কিছু বিষয় প্রকৌশলগত, কিছু দাপ্তরিক। সব বিষয় ভালোভাবে খুটিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য সময় লাগছে কিছুটা বেশি।” দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন