শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

কচুয়ার সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই রুগ্ন

কচুয়া প্রতিনিধি

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে করে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছেন রোগীদের চিকিৎসা সেবা। উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিতি উপজেলার একমাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের চিত্র এটি। ২০০৫ সালের ১২ এপ্রিল এখানে ৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হওয়ার পরে নতুন করে কোন দৃশ্যমান কাজ হয়নি বরং সময়ের পরিক্রমায় জরাজীর্ণ ভবনে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ঝুঁকি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ।

এখানেই শেষ নয় অবাক করার বিষয় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় হচ্ছে না রোগীদের ল্যাব টেস্ট। কাগজে কলমে হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ প্রথম শ্রেণির ডাক্তার হিসেবে ২৯টি পদ থাকলেও ডাক্তার আছেন মাত্র ৩ জন অর্থাৎ ডাক্তারদের ২৯ টি পদের মধ্যে ২৬ টি পদই আছে শূন্য। হাসপাতালের একমাত্র প্যাথলজিটি ও দীর্ঘদিন ধরে প্যাথলজিস্ট ও প্রয়োজনীয় জনবল এর অভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে সামান্য কিছু টেস্ট করার প্রয়োজন হলেই এখানকার মানুষকে ১৭ কিলো মিটার দূরে বাগেরহাট অথবা কচুয়ার বিভিন্ন ছোট ছোট প্যাথলজিতে দৌড়াতে হয়। প্যাথলজির মত ব্যবস্থাপনার অভাবে রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে এক্সরে মেশিন। জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেস্থাসিয়া পদে লোক আছে, তবে তিনি কচুয়ার পরিবর্তে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে।

হাসপাতালের মূল ভবনসহ কোয়াটারগুলো ঝুঁকিপুর্ণ, পরিত্যক্ত ও অকার্যকর থাকায় রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নানা সমস্যার কারণে বন্ধ আছে সিজার ও সব ধরনের অপারেশনের কাজ। জেনারেটর থাকলেও প্রয়োজনীয় তেল ও মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে করে বিদ্যুৎ গেলেই অন্ধকারে হাসপাতালটিতে ভুতুড়ে পরিবেশের তৈরি হয়। এ সকল সমস্যার কারণে কচুয়ার লক্ষাধিক মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক গড়ে প্রায় ১৫-২০ জন রোগী ভর্তি হয় এখানে। তবে হতাশার কথা হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালে কোন কোন সময় ৪/৫দিন অবস্থান করেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। জরুরি ও বহিঃবিভাগ হতে গড়ে প্রায় ২০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন বলে হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা যায়।

হাসপাতালে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ১৬৩টি পদের মধ্যে ১০২টি পদে লোকবল থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ৬১টি পদই রয়েছে শূন্য। এখানে সরকারি ভাবে কোন নৈশ প্রহরী নেই, ওয়ার্ডবয় পদে ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১ জন, তিনিও আবার দিনের বেলা কিছু সময় থেকে বাড়ি চলে যায়।

দেখা গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শূন্য পদগুলো হচ্ছে- আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট- শিশু, চক্ষু, মেডিসিন, শৈল্য, অর্থো, কার্ডিওলজি, ইএনটি, চর্ম ও যৌন,প্যাথলজিস্ট, অ্যানেসথেটিস্ট, মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক)। এছাড়াও মঘিয়া ও গোয়ালমাঠ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য ২ জন মেডিকেল অফিসার এবং গজালিয়া, ধোপাখালী, কচুয়া সদর, গোপালপুর, বাধাল ইউনিয়নের প্রতিটিতে একজন করে মোট ৭ জন সহকারী সার্জন। এছাড়াও কচুয়া উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাসান মাহমুদ জানান, “হাসপাতালের মূল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় আমরা অতিরিক্ত বিল্ডিং এর বারান্দায় ও বাইরে রোগীদের রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে আমি সহ আমরা মাত্র ৩ জন ডাক্তার দাায়িত্ব পালন করছি। আমি বহুবার চিঠি লিখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি, কিš এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাইনি।”

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ আ.স. মো: মাহবুবুল আলম আমাদের জানান, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে কয়েকবার আলোচনা করেছি ও চিঠি লিখেছি কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। তবে নতুন ডাক্তার নিয়োগ হলে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন