শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ফকিরহাটে পাতাল শিবমন্দিরে গুপ্তধনের খোঁজে অবৈধ খনন

সাগর মল্লিক, ফকিরহাট

বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রায় পাঁচশ বছরের প্রাচীন পাতাল জোড়া শিবমন্দিরের সুড়ঙ্গে গুপ্তধনের সন্ধানে রাতের আঁধারে অবৈধ খনন চলছে এমন অভিযোগে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও নিরাপত্তাহীনতায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি এখন কুচক্রী মহলের লালসার শিকার বলে অভিযোগ স্থানীয়রা। তাদের দাবি, ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে সোনার মূর্তি, কষ্টিপাথরের নিদর্শন ও মূল্যবান প্রত্নবস্তু লুকানো আছে এমন গল্পকে কেন্দ্র করে একদল লোক নিয়মিত মাটি খুঁড়ছে।

গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, চুনসুরকি ও পোড়া মাটির তৈরি জোড়া শিবমন্দির দুটি ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে আছে। খসে পড়া পলেস্তারা ও ফাটলের ভেতরে জন্মানো গাছপালা মন্দিরকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। মন্দিরসংলগ্ন জঙ্গলের ভেতর পাওয়া যায় সদ্য খনন করা মাটির স্তূপ।

মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান, সুড়ঙ্গের ভেতরে অন্তত ২৫টি সিঁড়ি পর্যন্ত মাটি সরানো হয়েছে। সেখানে খননের কাজে ব্যবহৃত শাবল, কোদাল, ঝুড়ি, বালতি ও একটি ত্রিশূল পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ঐতিহাসিক তথ্যমতে, পঞ্চদশ শতকে এ এলাকায় বসবাসকারী এক সাধু ব্রাহ্মণ ডাকাতদের সেবা করে জীবন বাঁচালে অনুতপ্ত ডাকাতরা ফিরে এসে পাতাল শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মাটির নিচে চুনসুরকির সিঁড়ি নেমে গেছে বহু গভীরে যা দু’দিকে ভাগ হয়ে বিভিন্ন কক্ষে পৌঁছায়। দেশভাগের পর পুরোহিতরা দেশ ছাড়লে মন্দিরটি অরক্ষিত হয় এবং সময়ের সঙ্গে পরিত্যক্ত হয়ে বনজঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।

মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান, অবৈধ খননের বিষয়ে জিডি করতে গেলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল তাদের চুপ থাকতে চাপ দেয়। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা থানায় অভিযোগ করতে পারেননি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষজন দ্রুত এই প্রত্নস্থাপনাটি সংরক্ষণ, সুড়ঙ্গ বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার এবং অবৈধ খননকারীদের শনাক্তে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

ইউএনও সুমনা আইরিন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মোঃ যায়েদ বলেন, “মন্দিরটি অত্যন্ত পুরোনো এবং সংরক্ষণযোগ্য। সুড়ঙ্গ খননের বিষয়ে তিনি অবগত নন, তবে স্থাপনাটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন