বাংলাদেশে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা এবং দীর্ঘমেয়াদি মৌসুমি পূর্বাভাসের ব্যবহার বাড়াতে খুলনায় আঞ্চলিক ‘ক্লাইমেট অ্যাপ্লিকেশন ফোরাম-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পর্যায়ের অংশীজনের পরামর্শক্রমে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবার প্রথমবার বিভাগীয় পর্যায়ে এ ফোরাম আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে কেয়ার বাংলাদেশের ‘নবপল্লব’ প্রকল্প, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের WEATHER READY প্রকল্প এবং RIMES বাস্তবায়িত UHCRBE প্রকল্প।
কর্মশালায় খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, তবে চরম এবং অপ্রত্যাশিত জলবায়ু ঘটনা দেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তিনি RCAF কে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে প্রশংসা করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাব মোকাবিলায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন।
কর্মশালায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম কামরুল হাসান বলেন, “RCAF প্রমাণ করেছে কীভাবে বিজ্ঞান, যোগাযোগ এবং বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা পূর্বাভাসকে কার্যকর করতে সাহায্য করতে পারে।”
স্বাগত বক্তৃতা করেন RIMES এর সিনিয়র মেটিরিওলজিক্যাল অফিসার সৈয়দা সাবরিনা সুলতানা। বক্তৃতা করেন RIMES এর জলবায়ু সেবা বিশেষজ্ঞ আসিফ উদ্দিন বিন নূর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফেরদৌস আলম, প্রজেক্ট ডিরেক্টর ব্রিজেস প্রকল্প, BBC মিডিয়া অ্যাকশন খন্দকার হাসানুল বান্না, ‘ফার্মারস ফার্ম স্কুল’ (FARRM) এর ফলাফল উপস্থাপন করেন মোহাম্মদ তানজিলুর রহমান, ড. একেএম রাকিবুল হাসান।
কর্মশালায় জানানো হয়, জলবায়ু–সংবেদনশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মৌসুমভিত্তিক পূর্বাভাসের সঠিক ব্যবহার কৃষি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, পানি–সম্পদ, স্বাস্থ্য ও নগর পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন খাতে নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফোরামে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের পূর্বাভাসের কার্যকারিতা পর্যালোচনা, ২০২৫ সালের চরম আবহাওয়া ঘটনাবলির অভিজ্ঞতা এবং চলতি শীত মৌসুমের পূর্বাভাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে Hydro-Met উদ্যোগ, কেয়ার বাংলাদেশের নবপল্লব প্রকল্প এবং বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের BRCiS প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন পূর্বাভাসের মূল্যায়ন ও নতুন শীতকালীন পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়। দৈনিক আবহাওয়ার বুলেটিন আরও ব্যবহারবান্ধব করতে অংশগ্রহণকারীদের মতামত গ্রহণ করা হয়।
ফোরামে ‘ফারমার্স ফার্ম স্কুল’ উদ্যোগের অভিজ্ঞতা এবং কৃষি–প্রাণীসম্পদ খাতে জলবায়ু তথ্যের ব্যবহারযোগ্যতা তুলে ধরা হয়। এছাড়া প্রাণী সম্পদ খাতের জন্য আবহাওয়া–নির্ভর ন্যাশনাল লাইভস্টক অ্যাডভাইজরি সার্ভিস (NLAS) পরিচিতি দেওয়া হয়।
সমাপনী আলোচনায় বক্তারা বলেন, আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ ও তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা জলবায়ু প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করবে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (BADC), প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর (DLS), CARE Bangladesh, BBC Media Action, RIMES, স্থানীয় গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থা।
খুলনা গেজেট/এমএম

