শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
কয়রার টেপাখালী লঞ্চঘাট সড়কে বরাদ্দ তিন বার, তবুও যাত্রী ওঠানামায় দুর্ভোগ

একই কাজে দ্বৈত বিল উত্তোলন!

তরিকুল ইসলাম

খুলনার কয়রায় একই কাজে বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক বরাদ্দ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। কয়রা ইউনিয়নের টেপাখালী লঞ্চঘাট সংলগ্ন রাস্তা সংস্কারে একটি এনজিও’র বরাদ্দের পাশাপাশি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার এবং উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দ্বৈত বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই কাজ দেখিয়ে উভয় প্রকল্পের বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এদিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দের পরেও লঞ্চঘাটে যাত্রী ওঠানামায় এখনও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রকল্পের কাগজপত্র যাচাই ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টেপাখালী লঞ্চঘাট উন্নয়নে তিন দপ্তর থেকে প্রকল্প দেওয়া হয়। কয়রা উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) এর আওতায় টেপাখালী লঞ্চঘাট মাটি ও ইট দ্বারা উন্নয়নে পাঁচ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই স্থানে এডিপি’র আওতায় এক লাখ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়, নাসির দোকান হতে লঞ্চঘাট অভিমুখে রাস্তা ইট দ্বারা উন্নয়ন। ইট দ্বারা উন্নয়নে এডিপি ও কাবিখার আওতায় দুইটি প্রকল্প দেওয়া হলেও একটি প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হয়। উভয় প্রকল্প কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ। কাজের পাশে কোন প্রকল্পের সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। দুই দপ্তরের কাগজপত্রে একই স্থানের একই ধরনের কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়। এডিপির কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী দপ্তরের বিলের ফাইলে কাজের আগের এবং পরের ছবির পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন, প্রাক্কলনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায়।

অপরদিকে, কাবিখার কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা-পিআইও এর দপ্তরের বিলের ফাইলে চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সময় নিয়ে ওই দপ্তরের কর্মকর্তা কাজের আগের এবং পরের ছবি দেখাতে সক্ষম হন। যা হুবহু এডিপি প্রকল্পের ছবির সাথে মিল রয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের কোনো প্রত্যয়ন দেখাতে সক্ষম হয়নি।

এর আগে, সুন্দরবন কোয়ালিশন নামক একটি এনজিও থেকে মাটি দ্বারা উন্নয়নের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করেন অরাবিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-ওডিএফ নামক স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা। কাজের পাশে তাদের সাইনবোর্ড রয়েছে।

এনজিওর কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা অরাবিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক কমলেস মন্ডল বলেন, “কাজটির ফান্ড রিসিভ করেন সিএনআরএস নামক একটি এনজিও।’

সরেজমিন দেখা যায়, টেপাখালী মোড়স্থ নাসিরের দোকান থেকে লঞ্চঘাটের পন্টুন পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১০০ মিটার। এরমধ্যে লঞ্চঘাট অভিমুখে ৬৫ মিটারের মতো রাস্তা মাটি, বালু ও ইট দ্বারা উন্নয়ন করা হয়েছে। বাকি রাস্তার উন্নয়ন না হওয়ায় যাত্রীদের কাঁদা মেখে পন্টুনে উঠতে হয়। এতে নারী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগের অন্ত নেই।

এ বিষয়ে উভয় প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সদুত্তর না দিয়ে প্রকল্প নিতে ভুল হয়েছে, পরে ভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি ।

কয়রা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাদের প্রকল্পের চাহিদা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন, কাজের আগের-পরের ছবিসহ যাবতীয় কাগজপত্র যুক্ত করে বিল দাখিল করেন প্রকল্প সভাপতি।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মামুনার রশিদ বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকল্প দাখিল করেন। ইউপি সদস্য কাজ সম্পন্ন করে বিল দাখিল করার পর আমরা বিল প্রদান করি। এডিপি’র কাজের বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। এখন জানতে পারছি এডিপির কাজ আমাদেরকে দেখানো হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

কয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান সরদার জানান, এডিপি’র প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় তিনি প্রত্যায়ন দেন। একই জায়গায় দুইটা প্রকল্প তিনি দেন নাই। তিনি শুধু কাবিখার প্রকল্পটি দাখিল করেছিলেন। এডিপির প্রকল্প উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন