বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস ক্যাডার ভুক্ত করণের দাবিসহ চার দফা দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাগেরহাটে সোমবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছে চলমান বার্ষিক পরীক্ষাও। বাগেরহাট সদর উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৭টি, যার মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় দুটি। সোমবার সকাল থেকে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ব্যানার টাঙিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। এর আগে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নোটিশ দিয়ে পরীক্ষার কার্যক্রম সাময়িকভাবে ¯গিত থাকার বিষয়টি জানান।
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ আবির হোসেনের মা আম্বিয়া বেগম বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে বিভিন্ন দাবিতে শুধু আন্দোলনই চলছে। এর মধ্যে শিক্ষকরা একের পর এক আন্দোলন করছেন, শিক্ষকরা তা করতে পারেন, আপত্তি নেই। কিš ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন কেন? শিক্ষার্থীদের কথা কি একটু ভাববেন না?”
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহারের মা রাজিয়া সুলতানা বলেন, “মাত্র তিন-চারটি পরীক্ষা বাকি আছে। এর মধ্যেই শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করেছেন। কয়েক দিন পরে আন্দোলন করলে কি খুব সমস্যা হতো? আমাদের মেয়েরা পরীক্ষার জন্য প্র¯ত ছিল, এখন নোটিস দিয়ে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক।”
একইভাবে সাতক্ষীরা সদর ও তালার চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে সোমবার বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষকরা পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করে। এতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে এসে ফিরে যায়।
অভিভাবকদের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “দাবি-দাওয়ার যৌক্তিকতা থাকলেও পরীক্ষার সময় এ পরিস্থিতি শিশুদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলবে।”
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক গোলাম মহিন উদ্দিন বলেন, “শিক্ষকদের দাবি মানা হোক-আমরাও চাই। কিন্তু ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন কতটা যৌক্তিক? বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আন্দোলন করলেও পারত। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে।”
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী এক শিক্ষক বলেন, “বছরের পর বছর ধরে সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চনার শিকার। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে, কিন্তু টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের ফাইল ঝুলে আছে। দাবি পূরণের নিশ্চয়তা ছাড়া পরীক্ষা নিলে আবার সব থেমে যাবে, তাই বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরীক্ষা বর্জন করেছি। কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচি আসবে, আমরা তা পালন করব।”
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, “২০ তারিখ থেকে আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষা চলছিল। আজ বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল, কিন্তু কয়েকজন শিক্ষক পরীক্ষা নিতে অস্বীকৃতি জানান। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরুরি সভা হয়েছে-সিদ্ধান্ত হয়েছে, আজ মঙ্গলবার থেকে যথারীতি পরীক্ষা নেওয়া হবে। যারা পরীক্ষা কাজে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবারের স্থগিত পরীক্ষা শনিবার নেওয়া হবে। আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষকদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, “পরীক্ষা বন্ধ করে যারা আন্দোলন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ থেকে সব স্কুলে পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন সময় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কেউ বাধা দিতে এলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খুলনা গেজেট/এনএম

