বুধবার । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ । ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

রূপসা ব্রিজের টোল প্লাজার পাশে বালুর ব্যবসা, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

রূপসা নদীর ওপর খানজাহান আলী (রহঃ) সেতু নির্মাণের পর দু’প্রান্তে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। ছুটির দিনসহ বিশেষ উৎসবে সেতুর পূর্ব প্রান্তে ভিড় জমে সব থেকে বেশি। কিন্তু এই পূর্ব প্রান্তে টোলপ্লাজা পার্শ্ববর্তী সেতু সংলগ্ন সড়কের পাশে দীর্ঘ দিন ধরে তিন ব্যক্তি অবাধে বালুর ব্যাবসা করে আসছে। বালু ব্যবসায়ীদের ভারি ভারি ট্রাক চলাচলে একদিকে সেতুর নিচের সড়কসহ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের বেহাল দশা।

অপরদিকে বাতাসে বালু ওড়ার কারণে সেতুতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এছাড়া রূপসা নদী থেকে বালু আনতে সড়ক বিভাগের রাস্তা কেটে পাইপ বসানো হয়েছে। সেতু সংলগ্ন সড়কের পাশের বালু ব্যবসায়ীরা হলেন, ফকিরহাটের খাজুরা এলাকার সাগর শেখ, রূপসার জাবুসা গ্রামের মেহেদী হাসান ও শামিম।

অভিযোগ রয়েছে, ‘৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় বালুর ব্যাবসা করতেন সাগর। তিনি কখনো শেখ রুবেল আবার কখনো শেখ সোহেলকে তার ব্যাবসায়িক পার্টনার বলেও দাবি করতেন। ফ্যাসিবাদের পতন হলেও সাগর রয়েছে বহাল তবিয়তে। ৫ আগস্টের পর অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে একইভাবে নতুন করে বালুর ব্যবসা শুরু করেছেন শামিম ও মেহেদী। মেইন সড়কের দু’পাশের এসব বালু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিকারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও সাধারণ পথচারীরা।’

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সেতু রক্ষা বাঁধ ও সরকারি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্থানীয়রা প্রশাসনকে অবহিত করলে নৈহাটী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মোঃ আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে এসে বালু সরবরাহ বন্ধ করে দেন। পরে পুনরায় পাইপের মাধ্যমে বালু সরবরাহ করতে গেলে থানা পুলিশও তা বন্ধ করে দেন। কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

ব্রিজে ঘুরতে আসা পথচারী শিহাব, মুনির, দেলোয়ার ও ফাহিম বলেন, বাতাসে বালু ওড়ার কারণে সেতুর নিচে বা উপরে দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই। এব্যাপারে প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ব্যবসায়ী সাগর শেখ বলেন, “আমি এখানে ৭ বছর ধরে বালুর ব্যাবসা করি। আমার ট্রেড লাইসেন্স আছে। সরকারি রাস্তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে আমি মালিকানা জায়গায় ব্যবসা করি।”

পরিবেশ দূষণ যাতে না হয় তার জন্য ট্রাকে করে বালু নিয়ে বের হওয়ার সময় নেট দিয়ে ঢেকে রাখি। তবে রাস্তা কেটে পাইপ বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে শেখ সোহেলের লোকজন আমার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে।”

অপর দুই ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান ও শামিমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াজ শেখ বলেন, “সড়কের পাশে বালুর ব্যবসা করার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। বাতাসে উড়ে মানবদেহে বালু প্রবেশ করায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে।”

তিনি উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাজেদুল হক কাওসার বলেন, “ধুলাবালি নাকে-মুখে গেলে ফুসফুসের রোগ যেমন ব্রংকাইটিস, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, হাঁপানি এবং সাইনোসাইটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই রোগগুলোর সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।”

রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখাইরুল ইসলাম শামিম বলেন, “এভাবে সরকারি রাস্তার পাশে বালুর ব্যাবসা করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যস্থা নেওয়া হবে।”

খুলনার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সাঈদ রহমান বলেন, “সড়কের পাশে বালুর ব্যাবসা করতে সবসময় নিষেধ করে আসছি। মৌখিকভাবে বার বার সতর্ক করা হলেও তাঁরা ইচ্ছামতো রাস্তার ক্ষতি করে বালুর ব্যাবসা করে আসছে। এবার লিখিতভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন