বর্নাঢ্য আয়োজনে উদযাপন হলো মোংলা বন্দরের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী)। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দিনভর এ উপলক্ষ্যে নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বেলুন ও পায়রা উড়ানো। এ সকল কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, মোংলা বন্দর হলো সেবা ও উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বন্দরের সক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর বিদেশি জাহাজ, কার্গো হ্যান্ডলিং ও গাড়ি আমদানিতে রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জেটি পর্যন্ত ১৩১ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ধরে রাখা জরুরি। সকলের প্রচেষ্টায় আজকের এই বন্দর লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র এ বন্দরের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ঐতিহ্য ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার, সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ. কে. এম আনিসুর রহমান, পরিচালক (বোর্ড) কালাচাঁদ সিংহ, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ বন্দর ব্যবহারকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কার্গো হ্যান্ডলিং এর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, অর্থবছর শেষে বন্দরে এক কোটি চার লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন এবং ১৭.২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ হাজার টিইইউজ, অর্থবছর শেষে বন্দরে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৪৫৬ টিইইউজ বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, অর্থবছর শেষে বন্দরে ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্দরের নীট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থবছরে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা যা ২০৩.৪৯ শতাংশ বেশি। বর্তমান অর্থ বছরে প্রথম পাঁচ মাসে জাহাজ এসেছে ৩৫৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ টিইইউজ, গাড়ি আমদানি চার হাজার একশত ৩৯টি, পণ্য আমদানি-রপ্তানি ৪৪ লাখ টন। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘন্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ৫টি জেটিতে একই সাথে ৫টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সুসম্ভবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ এবং রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে সহজতর ও দ্রুত করবে। মোংলা বন্দরে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে Port Reception Facility (PRF) প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলে তেলবাহী কোন জাহাজ বা ট্যাংকার থেকে দুর্ঘটনা বশত: পানিতে তেল নিঃসরণ হলে তেল অপসারণকারী ভেসেলের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করে নদী ও সামুদ্রিক পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করার সক্ষমতা অর্জন করবে মোংলা বন্দর।
অনুষ্ঠানে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে সর্বোচ্চ জাহাজ কয়লা, মাসুল প্রদান, সার, সাধারণ পণ্য, গ্যাস, কন্টেইনারবাহী জাহাজ আনয়নকারী, গাড়ির জাহাজ, মালামাল হ্যান্ডিলিং প্রভৃতি বিষয়ে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র, কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং পিআরএল ভোগরত ৫৬জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়।

