সোমবার । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ । ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
৫১৫ প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য দীর্ঘদিন

বাগেরহাটে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্থায়ী প্রধান শিক্ষকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ১,১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১৫টি প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। এতে বিদ্যালয় পরিচালনা, শিক্ষা কার্যক্রম এবং শিক্ষার সামগ্রিক মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১,১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১৫টি প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে আপাতত ১৯৮ জন শিক্ষক ‘কারেন্ট চার্জে’ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই অস্থায়ী ব্যবস্থায় বিদ্যালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, “বাগেরহাটে ১,১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫১৫টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”

তিনি জানান, একটি মামলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি প্রক্রিয়া আটকে আছে। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। রায় পাওয়া মাত্রই আমরা দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নেব। এ ছাড়া দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মহাপরিচালক (ডিজি) উচ্চ আদালতে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানান তিনি।

এদিকে প্রধান শিক্ষকের সংকট ছাড়াও জেলার অনেক বিদ্যালয় অবকাঠামোগত ঘাটতি, শিক্ষক সংকট ও শিক্ষার্থী বৃদ্ধির চাপে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। কচুয়া উপজেলার ৬১ নম্বর শিবপুর পল্লী উন্নয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও করুণ। বিদ্যালয়টিতে মাত্র দুটি কক্ষ থাকায় পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে নিতে হয়।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খাতুন বলেন, “ক্লাসরুম কম, মাঠ ছোট সব মিলিয়ে খুব কষ্ট করে পাঠদান করতে হচ্ছে। মাঠে বালু ফেলে সমান করা গেলে অন্তত শিশুরা স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারত।”

তিনি আরও জানান, শিক্ষক সংকটও তীব্র। একজন শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন, আরেকজন আগামী ২৬ মার্চ এলপিআরে চলে যাবেন, ফলে নিয়মিত পাঠদান আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম বলেন, “স্কুলে আসতে ভালো লাগে। কিš ক্লাসরুম কম, শিক্ষকও কম। মাঠও খুব ছোট।”

শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আশঙ্কা, মামলার নিষ্পত্তি বিলম্বিত হলে সংকট আরও বাড়বে এবং জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলবে। তাদের প্রত্যাশা, আদালতের রায় দ্রুত হলে পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু করে শূন্য পদগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে। ততদিন পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক ও সীমিত সম্পদের ওপর ভরসা করেই বাগেরহাটের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে হবে, যা দীর্ঘদিনের কাঠামোগত সমস্যার একটি সাময়িক সমাধান ছাড়া আর কিছু নয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন