সোমবার । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ । ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

৭৫ বছরে মোংলা বন্দর

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা শনিবার প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর পূর্ণ করল। দীর্ঘ এই যাত্রায় নানা সংকটের মধ্যেও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কমবেশি ভূমিকা রেখে চলেছে বন্দরটি। নৌ, সড়ক ও রেলপথ এসব অবকাঠামো তৈরি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দরের ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৯৫০ সালে জয়মনির গোলে সিটি অব লিয়ন্স নামক জাহাজ নোঙ্গর করার মধ্য দিয়ে এ বন্দরের যাত্রা শুরু।

ভৌগোলিক কারণে মাত্র ৩ বছরের মাথায় বন্দরটির কার্যক্রম সরানো হয় বাগেরহাটের মোংলায়। সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করেছিল ওই জাহাজ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র বলেন, “এটি প্রথমে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৭ সালের মে মাসে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই বন্দর। ১৯৮৭ সালের মার্চে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বন্দরের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘ নৌপথের নাব্যতা সংকট। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটিতে বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় নৌপথটি খনন করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিয়মিতভাবে খননের মাধ্যমে এই বন্দরকে গতিশীল করে তোলা হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। বন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের জেটি, মুরিং বয়া ও অ্যাংকোরেজে একই সঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙরের সুবিধা রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সুবিধার্থে বন্দরকে ঘিরে এখন ট্রানজিট শেড, ওয়্যারহাউস, কনটেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের ১৬১টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২টি সহায়ক জলযান রয়েছে।”

নতুন বছরের প্রথম দুই সপ্তাহে অন্তত ৪২টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে। বেড়েছে কনটেইনার পণ্যবাহী জাহাজের আগমন। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন বন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জাহাজের শ্রমিকরা। বিগত বছরের তুলনায় বেশিসংখ্যক জাহাজ আসায় বেড়েছে বন্দরের আয়।

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এ বন্দর। নৌ, সড়ক ও রেলপথের মতো সুবিধা বিদ্যমান থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দরের ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বেড়েছে।

২০২৫ সালের শুরু থেকেই বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন আগের তুলনায় বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে দৈনিক ১৮-২০টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কয়লা, সার, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, এলপিজি ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে। এরমধ্যে ১ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এ বন্দরে এসেছে ৪২টি জাহাজ।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বন্দরে ৪১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। ওই সময়ে ১০ হাজার ৩৮৬টি টিউজ কনটেইনার খালাস করা হয়। প্রথম ছয় মাসে গাড়িবাহী ১০টি জাহাজে পাঁচ হাজার ৬৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে।

একই সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭১ টন পণ্য, যা থেকে ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিদেশি জাহাজের আগমনের হার ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কনটেইনারবাহী জাহাজ ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন