বান্দার আমলেই নির্ধারণ হবে পরকালে তার ঠিকানা জান্নাত নাকি জাহান্নাম। তাই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর ‘পরীক্ষায়’ উত্তীর্ণ হয়ে পরকালে সফল হতে মহান রবের হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ এবং তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ জরুরি।
পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৭)
এ ক্ষেত্রে পরকালে যারা সফলকাম হবে তারা অনন্তকাল জান্নাতে বসবাস করবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তারা জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮২)
তাই পরকালে সফলকাম হতে বিভিন্ন সময়ে বর্ণিত হাদিসে উম্মতদের যেমন নবীজি (সা.) নানা বিষয়ে আদেশ-নিষেধের কথা জানিয়েছেন, তেমনি বাতলে দিয়েছেন উত্তম আমলের পথও। এরমধ্যে একটি হাদিসে মহান রবের কাছে বেশি প্রিয় তিনটি আমলের কথা এসেছে।
যথাসময়ে নামাজ পড়া
ইবনু মাস্’ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজ (আমল) আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়? তিনি (রাসুল সা.) বললেন, সঠিক সময়ে সালাত (নামাজ) আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোন কাজ? তিনি বললেন, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন কাজ? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২; মেশকাত, হাদিস: ৫৬৮)
এ ক্ষেত্রে নামাজ আদায়ের পুরস্কারের কথাও হাদিসে এসেছে। উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) যা আল্লাহ তা’য়ালা (বান্দার জন্য) ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে অজু করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকু ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মেশকাত, হাদিস: ৫৭০)
আবার নামাজ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে কড়া নিষেধের কথাও এসেছে হাদিসে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামাজ) পরিত্যাগ করা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৯)
বাবা-মায়ের খেদমত
পিতা-মাতার খেদমতের বিষয়ে খোদ মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ইবাদাত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনোকিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, ইয়াতিম, মিসকীন, প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের যারা দাম্ভিক ও অহংকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)
অপর আয়াতে এসেছে, আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। (সুরা বনি-ইসরাঈল, আয়াত: ২৩)
আল্লাহর পথে জিহাদ
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের তুলনা ওইরূপ সায়িমের (রোজাদারের) ও সালাত আদায়রত অবস্থায় তিলাওয়াতকারীর ন্যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত সিয়াম পালনে ও সালাত আদায়ে নিমগ্ন থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৯৬; মেশকাত, হাদিস: ৩৭৮৮)
খুলনা গেজেট/এএজে

