একসময় যেখানে ছিলো গ্রাম। বসবাস ছিলো ৪শ’ থেকে ৫শ’ পরিবারের। সেখানে বহমান ভৈরব নদ। ভিটেমাটি হারিয়ে ওই গ্রামের অসহায় পরিবারগুলির ঠিকানা এখন অন্যের জমিতে। এত ক্ষয়ক্ষতির পর নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত ভৈরব পাড়ে থাকা রূপসা উপজেলার তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
গ্রামগুলি হলো দেয়াড়া, যুগীহাটি ও শোলপুর। তবে নদী গর্ভে আগেই বিলিন হয়েছে শোলপুর গ্রামের এক চতুর্থাংশ। নামে গ্রাম থাকলেও শোলপুরে বসবাস ৮/১০টি পরিবারের।
সরেজমিন পরিদর্শনে ভয়াবহ ভাঙন রোধে রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা রিকতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। সরকারি স্থাপনা এবং ওয়াপদা বেড়িবাঁধ না থাকায় সেখানে কোনো বরাদ্দ দিতে রাজি নয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এলাকাবাসী জানায়, গত ১২ নভেম্বর রাতে হঠাৎ আইচগাতীর যুগীহাটি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় তীব্র নদী ভাঙনে গ্রাম রক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ভাঙনের ফলে গ্রামটির সহস্রাধিক পরিবার চরম ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছে। ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ক্রমশই এগিয়ে যাচ্ছে সর্বনাশী ভাঙন। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অতি-জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে।
সূত্র বলছে, আইচগাতী ইউনিয়নের ১২ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় দেড় দশকের অধিক সময় ধরে স্থায়ীভাবে ভেড়ি বাঁধ সংস্কারের কোনো কাজ না হওয়ায় এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
যুগীহাটি গ্রামের ভাঙন কবলিত ভৈরব পাড়ের খাজা ব্রিকস এর ফিরোজ বলেন, “গত এক সপ্তাহের ভাঙনে প্রায় এক বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।”

তিনি বলেন, “ভয়াবহ এই ভাঙন রোধ করা না হলে শোলপুর গ্রামের মত যুগীহাটি গ্রামও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”
যুগীহাটি গ্রামের মিকাইল বলেন, “আমাদের বসত বাড়ি ছিলো শোলপুর গ্রামে। যা ভৈরবে বিলিন হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর হারিয়ে এখন ভাড়া বাড়িতে বসবাস করি।”
শোলপুর গ্রামের বাড়ি-ঘর হারা রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ভিটে-মাটিতো নদীতে গেছে। এই পুরো শোলপুর গ্রামটা ধরেই নদীতে চলে গেছে।”
তিনি বলেন, “এই গ্রামে ৪/৫ শ’ পরিবার ছিলো। তারা বসত বাড়ি হারিয়ে অন্য গ্রামে কেউ ভাড়া থাকে, আবার কেউ কেউ পরের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছে।”
একই এলাকার আব্দুল হক বলেন, “আমাদের শোলপুর গ্রামটা জুড়ে এখন ভৈরব নদ। এই ভৈরব একসময় ছিলো নদীর ওই পারে। ভাঙতে ভাঙতে গ্রাম পার হয়ে ক্রমেই এগিয়ে আসছে। ভাঙনে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাইনি।”
আইচগাতী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাছুম বিল্লাহ বলেন, “ভৈরবের তীব্র ভাঙনে এ ইউনিয়নের শোলপুর গ্রাম আগেই বিলিন হয়ে গেছে। নতুন করে যুগীহাটি গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইতোমধ্যে ভাঙন রোধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা রিকতা বলেন, “সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনদুর্ভোগ বিবেচনায় বেড়িবাঁধটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করার কথা বললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা।
এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, “বাঁধটি আমাদের নয়। তাছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকার সন্নিকটে সরকারি স্থাপনা ও জনবসতি না থাকায় আপাতত আমাদের কিছু করণীয় নেই।
খুলনা গেজেট/এনএম

