দুদকের খুলনাস্থ পিপি শেখ মোঃ লুৎফুল কবির নওরোজ আত্মহত্যা করেন। দু’বছর তদন্ত শেষে পিবিআই এর আদালতে দেওয়া চার্জশিটে এ তথ্য উল্লেখ করে। ধার দেনা পরিশোধ করতে না পেরে এ আইনজীবী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জীবদ্দশায় তিন স্ত্রী নিয়ে ছিল তার দাম্পত্য জীবন। রূপসা নদীর তীরে বটিয়াঘাটার তেতুলতলা গ্রামের পুকুর পাড় থেকে তার মৃত দেহ উদ্ধার হয়। দিনটি ছিল ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই। গতকাল মঙ্গলবার ধার্য দিনে বাদী আদালতে সময়ের জন্য প্রার্থনা করে।
তিনি রূপসা উপজেলার মৈশাঘুনী গ্রামের মোঃ এরফান আহমেদ শেখের পুত্র। ১৯৯৪ সালে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। আদালতে দেওয়া চার্জশিটে পিবিআই এর সাব ইন্সপেক্টর মোঃ রাজীব রায়হান উল্লেখ করেন, এ আইনজীবী অনেকের কাছে ধার দেনা ছিল। রূপসা উপজেলার নৈহাটি গ্রামের ইব্রাহিম শেখের স্ত্রী বিলকিস বেগম এর কাছ থেকে জমি বিক্রির কথা বলে ২২ লাখ টাকা নেন। জমি হস্তান্তর করতে না পারায় মৃত আইনজীবী ১৮ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। অগ্রণী ব্যাংকের স্যার ইকবাল রোড শাখায় উল্লিখিত পরিমাণ টাকা না থাকায় তার বিরুদ্ধে এনআই এ্যাক্টের মামলা হয়।
এছাড়া গোপালগঞ্জের গোপীনাথপুর গ্রামের বারেক মিয়ার স্ত্রী জোসনা বেগমের কাছ থেকেও টাকা ধার নেয়। ধার দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই পীর খানজাহান আলী (রহঃ) এর ব্রিজের ওপর থেকে রূপসা নদে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। ব্রিজের নিচে পিলার ও লোহার টুকরোর আঘাতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। ১৬ জুলাই উল্লিখিত স্থানে তার মরদেহ ভাসতে দেখা যায়। মাথার পেছনের ওপরের অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পর দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন নাহার বাদী হয়ে ১৭ জুলাই বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করে।
চার্জশিটে তিনি আরও উল্লেখ করেন একই বছরের ১৩ জুলাই জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ তারার ড্রয়ারে ভিকটিম তার মৃত্যু সম্পর্কিত একটি চিরকুট লিখে রাখে। তাতে লেখা ছিল তার মৃত্যুর পর আদালতের কার্যক্রম একদিন যেন বন্ধ না থাকে। চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত, দেনাগ্রস্ত ও পারিবারিক অশান্তির মধ্যে ছিলেন।
চার্জশিটের বিবরণ অনুযায়ী তিনি ১৯৯২ সালে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার কামটা গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার কন্যা চম্পা বেগমকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবন ছিল ৬ বছরের। ২০০২ সালে মহিষাগুনি গ্রামের ইউনুস আহমেদ মল্লিকের কন্যা জেসমিন নাহারকে বিয়ে করেন। তার দুই পুত্র। মৃতের পৈতৃক ভিটেই তার দ্বিতীয় স্ত্রী দু’পুত্রকে নিয়ে বসবাস করছে। ২০০৮ সালে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ আপড়াগাছিয়া গ্রামের ময়নুদ্দিন খাঁর মেয়ে হেনার সাথে বিয়ে হয়। এ দাম্পত্য জীবন ছিল ৬ বছরের। ২০১৯ সালে বয়রার সুলতানা পারভীন চুমকিকে বিয়ে করে। বিয়ের ১৯ দিন পর আইনজীবী আত্মহত্যা করে। তদন্ত কর্মকর্তা ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় প্রাথমিকভাবে সত্যতা প্রমাণ না পাওয়ায় সন্দিগ্ধ আসামি সুলতানা পারভীন চুমকিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করে। এ মামলার তদন্তকালে সন্দিগ্ধ আসামির ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রত্যক্ষদর্শী বা বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাদীও সন্দিগ্ধ আসামি সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী বা বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তা গত ২৪ আগস্ট সংশ্লিষ্ট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম

