বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী শাসক শেখ হাসিনা। টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। সহিংস বিক্ষোভের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন। তার ক্ষমতায় থাকার শেষ ২৪ ঘণ্টা স্মরণ করলে অনেক অজানা তথ্য সামনে আসে।
জার্মানের একটি সংবাদ সংস্থা ‘নিক্কেই এশিয়া’। তাদের এক প্রবন্ধে গতবছর ২৪ আগস্ট লেখা হয় ‘দ্য ডাউনফল অব শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ’স্ আয়রন লেডি’। তরু তাকাহাসির লেখা ওই নিবন্ধে শেখ হাসিরার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার বর্ণনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শেখ হাসিনা ১৫ বছরের শাসনামলে হয়ে ওঠেন স্বৈরশাসক। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি মাত্র ৪ বছরের মাথায় সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। জার্মানিতে থাকায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। পরে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আন্দোলন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে পরাজিত হন। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনিই এ ব্যবস্থা বাতিল করেন। হয়ে ওঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রনায়ক। বিরোধীদল দমন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাত্র ৬ বছর আগে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। ৫০ হাজার শিক্ষার্থী ওই আন্দোলনে অংশ নেয়। সে সময় শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের সব কোটা বাতিল করেন। কিন্তু গেল বছর ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক এবং কোটা বলবৎ থাকবে বলে রায় দেয়। আদালতের সিদ্ধান্তের পর আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়। তারা অভিযোগ করে রাজনৈতিক চাপের কারণে আদালত এ রায় দিয়েছে। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন বিএনপি’র উসকানির কারণে ছাত্ররা এ আন্দোলন করছে। পরে তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলায় কোটা আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেয়।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন’স ইনস্টিটিইট অব ডেভেলপিং ইকোনমিক্স এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মায়ুমি মুরাইয়ামা বলেন, “১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে তাকে কর্তৃত্বপরায়ণ মনে হয়নি। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে স্বৈরচারী প্রবণতা স্পষ্ট হতে শুরু হয়। দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিচারের ব্যবস্থা করেন। তার বাবার অসম্মানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার মতের অমলি হলে ছাত্রলীগ দিয়ে এবং প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে সকল কিছু দমন করতেন। তাঁর আশপাশে এক পর্যায়ে তোষামোদকারীদের দিয়ে ঠাসা ছিল। তিনি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণ ও আকাক্সক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর যে কারণে দেশজুড়ে বাড়তে থাকা বিক্ষোভ দমনে ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেন। ওই রাতে সেনা প্রধান অনলাইনে তার অফিসারদের সাথে বৈঠক করেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসে বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি না চালানোর। পরে সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে ফোনে এ কথা জানিয়ে দেন। বিক্ষোভ দমনে প্রধান ভূমিকায় ছিল পুলিশ।
শেখ হাসিনা অতিসুরক্ষিত বাসভবন গণভবনে ছিলেন। ৫ আগস্ট সকালে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের দমনে ব্যর্থ হয়। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগের অনুরোধ করলে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে রেহানাকে অনুরোধ করে কাজ না হওয়ায় ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের ফোনে পদত্যাগে রাজি হন। দ্রুত তাকে সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতে পাঠানো হয়। এর মধ্য দিয়ে লৌহমানবী শেখ হাসিনার পতন হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম

