শনিবার । ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২

নেই পশু চিকিৎসক, হুমকির মুখে খামার

তাপস বিশ্বাস, ফুলতলা

দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে ধুকছে ফুলতলা উপজেলার প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল। মোট ১১টি পদের মধ্যে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ভেটেরিনারী সার্জন (ভিএস)। সেই পদটি দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ শূন্য রয়েছে এই হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অনেক পশু মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে বেসরকারি ভাবে নাম মাত্র চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে খামারীরা। দ্রুত জনবল সংকটের সমাধান করে উন্নত চিকিৎসা সেবা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খামারীরা।

ফুলতলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ভেটেরিনারী সার্জন (ভিএস) পদটি খালি থাকলেও এখানে শূন্য পদ পূরণ করা হচ্ছে না। এছাড়া মোট ১১টি পদের মধ্যে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ডাঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম ভেটেরিনারী সার্জন (ভিএস) ২০১৮ সালে প্রমোশন নিয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান। তারপর থেকে ওই পদে আর কাউকে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলামকে প্রশাসনিক কাজে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। যার ফলে ফুলতলার ৪টি ইউনিয়নের গবাদি পশু, হাস মুরগি খামার, ছাগল ভেড়ার চিকিৎসা করাতে হয় ৩ মাস ট্রেনিং প্রাপ্ত নামমাত্র চিকিৎসক দিয়ে। এতে খামারীরা যেমন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত তেমনি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই উপজেলায় পারিবারিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে প্রায় এক হাজার পশু পাখির খামার রয়েছে। এর আগে অবশ্য ২ হাজারের উপরে বিভিন্ন খামার ছিল। বিভিন্ন কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুগ্ধ খামার ১২৪টি, ছাগলের খামার ২১৫টি , ভেড়া ৩টি, লেয়ার খামার ৫০টি, ব্রয়লার খামার ৩৬৬টি, হাঁসের খামার ৫টি, কোয়েল ১২টি, এড়ে মোটাতাজা করণ ৬৫টি।

স্থানীয় খামারী ও এলাকাবাসী বলেছেন, চিকিৎসা সংকটে সংশ্লিষ্ট খামারীরা গবাদি পশু নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গরু ছাগল ভেড়া হাঁস মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণীর সাথে জড়িতদের বাইরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।

আলকা গ্রামের সরদার মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারিভাবে হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে পারলে আমাদের খরচ অনেক কম হয়। তাই জরুরিভাবে জনবল সংকট সমাধানের দাবি জানান।

একই গ্রামের সরদার মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে চিকিৎসার অভাবে আমার একটি গাভী মারা গেছে। হাসপাতালের চিকিৎসা না পেয়ে পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করার কারণে প্রায় লক্ষাধিক টাকা দামের গাভীটি মারা গেছে।

গাড়াখোলা গ্রামের আব্দুস সালাম আকুঞ্জি তার পোষা বিড়ালটি লাইগেশন করার জন্য স্থানীয় পশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে দীর্ঘদিন ধরে ভিএস না থাকায় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা দৌলতপুর কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সরকারি যে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেটি গ্রামে দেখাই যায় না। গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা সামান্য ট্রেনিং প্রাপ্ত পল্লী চিকিৎসক।

এদিকে বসুরাবাদ গ্রামের ভেড়া খামারী মালিক লক্ষ্মী রানী বিশ্বাস বলেন, আমাদের গ্রামের ভেড়ার দুটি খামার রয়েছে। খামার দুটিতে প্রায় ৪০টি ভেড়া রয়েছে। বিল ডাকাতিয়ার মধ্যে গ্রামটির অবস্থান বলে এখানে সরকারি কোনো ডাক্তারই আসেনা। ফলে বেসরকারি সকল ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামটি।

জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো শূন্য রয়েছে। এ কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সংকট সমাধানের জন্য শূন্য পদ গুলি পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট আবেদন জানানো হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন