না পাওয়ার কষ্ট যতটা না যন্ত্রণা দেয়, তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা দেয় পেয়ে হারানোর কষ্ট। ঠিক এমনি একটি পরিস্থিতির মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে ডুমুরিয়ার ভদ্রা পাড়ের আবাসন প্রকল্পের প্রায় দেড়শ’ পরিবার। গোটা ঘরগুলো রয়েছে নদী খননের সীমানায়। অপরিকল্পিতভাবে সরকার নদীর জায়গায় ঘর নির্মাণ করার ফলে এখন বিপাকে প্রকল্পের বাসিন্দারা!
জানা যায়, যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি নদীর ৮১ কিলোমিটার খনন কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে ভদ্রা নদী খনন। যে নদীর পাড়ে রয়েছে সরকারের আবাসন প্রকল্প। ২০২১-২২ ও ২০২৩ অর্থ বছরে ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গৃহহীন ও বাস্তচ্যুত অসহায় মানুষের জন্য নদীর চর ভরাটি জায়গায় সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১ হাজার ১৫৫টি পরিবার মাথা গোঁজার ঠাই খুঁজে পায়। ছিন্নমূল মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সরকারের বৃহত্তর প্রচেষ্টা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনায় ঘর নির্মাণ না করায় বিফলে যেতে বসেছে গরিবের স্বপ্ন। সম্প্রতি চুকনগর, কাঠালতলা ও বরাতিয়ার ১৩৯ ঘর ভদ্রা নদী খননের হুমকিতে পড়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে প্রবহমান নদীর চরে ঘর তৈরি করায় নদীর সীমানা সংকুচিত হয়ে পড়ে। সাড়ে ৩ বছর আগে গৃহহীনদের মাঝে ঘর উপহার দিলেও আজও তারা বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এরই মধ্যে খবর এসেছে ঘর উচ্ছেদের। এযেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’! এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রকল্প অধিবাসীরা। ঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করা তাদের জন্য যেমন কঠিন হয়ে পড়বে তেমনি কর্মসং¯ান সৃষ্টি করাও দুরূহ ব্যাপার হবে। এমন দুশ্চিন্তায় চরম আতঙ্কে দিন কাটছে ভদ্রা পাড়ের আবাসনের বাসিন্দারা।
চুকনগর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা হযরত গাজী বলেন, “আমরা প্রায় সাড়ে ৩ বছর হবে এখানে এসেছি। ৬মাস আগে পিলার পুঁতেছে, এখনও কারেন্ট আসেনি। অন্ধকার জীবন-যাপন আমাদের। এরই মধ্যে লাল প্লাগ টানিয়ে দিয়েছে। আমাদের ঘর যদি না থাকে তাহলে কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো?”
আবাসনের অধিবাসী সরস্বতী নন্দী জানায়, “তার শ্বশুরবাড়ি কোনো জায়গা-জমি নেই। বিয়ের পর মামাশ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। এরপর বাবার বাড়ি চুকনগর এলাকায় এসে আবাসনে একটা ঘর পেয়েছি। স্বামী-সন্তান নিয়ে খুবই ভালো ছিলাম। নদী খননে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু যদি হারিয়ে যায় তাহলে চরম বিপাকে পড়তে হবে আমাদের।”
আবাসনের ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা কমল সরকার জানান, “দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই নদীর চর ভরাটি জায়গায় বসবাস করে আসছেন তারা। তিনি একটা সময় চুকনগর খেয়াঘাটের পাটনি গিরি করেছেন। এরপর সরকারের দেওয়া ঘর পেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন কাটাচ্ছেন তিনি। আইনগতভাবে তারা ঘরের বৈধ মালিক। সুতরাং পুনর্বাসনের ব্যব¯া না করে ঘর ভেঙে নদী খননের চেষ্টা করলে তিনি বাধা দিবেন বলে জানিয়েছেন।”
এ বিষয়ে স্থানীয় আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন জানান, “সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে এবং প্রবহমান নদীর চর ভরাটি জায়গা শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাসন প্রকল্প তৈরি করা হয়। একক সিদ্ধান্তে এবং নিজের তত্ত্বাবধায়নে তৎকালীন ইউএনও সাহেব নদীর জায়গায় ঘরগুলো করে গেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ভদ্রা নদীর তীরে চুকনগর গরুর হাটের পাশে ৬৫টি, কাঠালতলায় ২নং পেজে ২৬টি ও বরাতিয়া ৪৮টি ঘর নদী খননের সীমানায় পড়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, “যেহেতু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নদী খনন হচ্ছে। সুতরাং সঠিক নিয়মে খনন হবে। তবে নদী খননের নির্দিষ্ট সীমানায় ঘর পড়লে অবশ্যই খননের আগে সামাজিক পুনর্বাসন বা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
খুলনা গেজেট/এনএম

