পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
তিনি চিরঞ্জীব-জীবনদাতা ও চিরস্থায়ী-স্থিতিদাতা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। আকাশসমূহে যা আছে ও পৃথিবীতে যা আছে সব তারই। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫)।
ইসলাম এই দাবি করে যে, এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হলেন একজন জীবন্ত প্রভু প্রতিপালক। তিনি নিজ বান্দাদের জন্য বর্তমান যুগেও সেভাবেই প্রকাশিত হন যেভাবে পূর্ববর্তী যুগসমূহে প্রকাশিত হয়েছেন।
আদি থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত তার গুণাবলির কোনো একটি গুণও নষ্ট হয়নি। তিনি আজও সেভাবেই শুনতে পান যেভাবে পূর্বে শুনতেন আর আজও সেভাবেই পুণ্যবানদের সাথে ব্যবহার করেন যেভাবে পূর্বে করতেন।
আল্লাহতায়ালা জীবন্ত এবং চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী হওয়াই মানুষকে তার ওপর ঈমান আনতে, তার সাথে সম্পর্ক রাখতে, তার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করতে বাধ্য করে। যদি তিনি জীবন্ত এবং অনাদি ও অনন্ত না হন তাহলে তার জীবন সম্পর্কেও ভীতি থেকে যাবে যে, তিনি আবার আমাদের পূর্বেই না মারা যান।
আল্লাহতায়ালা নিজের জীবন্ত হওয়ার প্রমাণ দেওয়ার মাধ্যমে তার ওপর তাওয়াক্কুল করার দাওয়াত দিয়েছেন এভাবে যে, তিনি বলেন : আর তুমি সেই চিরঞ্জীব (সত্তার) ওপর ভরসা কর যার মৃত্যু নেই। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৫৮)।
আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেন : এ (পৃথিবীতে) যা-ই আছে সবই নশ্বর, কিন্তু প্রতাপ ও মর্যাদার অধিকারী তোমার প্রভু-প্রতিপালকের সত্তা অবিনশ্বর। (সুরা রহমান, আয়াত : ২৬-২৭)।
অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের সব জগতের প্রত্যেকটি সত্তা পরিবর্তনশীল এবং নশ্বর। আর যার ওপর কোনো পরিবর্তন এবং ধ্বংস আপতিত হবে না তিনিই হলেন খোদা।
আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান এবং বিশ্বাসই প্রকৃত পক্ষে ধর্মের ভিত্তি এবং আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু। এটি ছাড়া ধর্মের চিন্তাই করা যায় না।
আল্লাহতায়ালার সত্তাকে একটি জীবন্ত বাস্তবতা বা নিদর্শন রূপে উপস্থাপন করেছে। তিনি এক জীবন্ত এবং চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী প্রভু। তার জীবন্ত সত্তার একটি প্রমাণ হলো, তিনি নিজ বান্দাদের দোয়া শুনেন এবং সেগুলোর উত্তর দেন।
যেভাবে আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (সুরা মুমিন, আয়াত : ৬০)।
আল্লাহর সঙ্গে মহানবী (সাঃ)-এর সম্পর্ক এবং এক জীবন্ত সৃষ্টিকর্তার ওপর ঈমান এবং এর প্রমাণের হাজার হাজার উদাহরণের মাঝ থেকে শুধু একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।
মহানবী (সাঃ) বিভিন্ন বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লিখেন। মহানবীর (সাঃ) এই চিঠি যখন ইরানের বাদশাহ কিসরার কাছে পৌঁছে দেন তখন এই চিঠির লেখা পড়ে তার এত রাগ হয় যে, সে এই চিঠিকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে এবং বলে, “আমার গোলাম হয়ে আমাকে এভাবে সম্বোধন করে।”
এরপর সে তার ইয়ামেনের গভর্নরকে হুকুম দেয়, এই আরবী অর্থাৎ মহানবীকে বন্দী করে আমার সামনে উপস্থাপন করা হোক। অতএব ইয়ামেনের গভর্নর মহানবী (সাঃ)কে বন্দী করার জন্য দু’জন লোক প্রেরণ করে।
তারা মদীনায় পৌঁছে মহানবীকে (সাঃ) উপদেশের মাধ্যমে বুঝায় যে, আপনি আমাদের সাথে চলুন নতুবা কিসরা আপনার দেশকে ধ্বংস করে দিবে। তিনি (সাঃ) বলেন, “তোমরা আজ রাতে এখানে অবস্থান কর, আমি ইনশাল্লাহতায়ালা আগামীকাল তোমাদের উত্তর দিব।”
তারপর তারা যখন দ্বিতীয় দিন মহানবীর (সাঃ) কাছে যায় তখন মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মালিকের (অর্থাৎ ইয়ামেন এর অধিকারীর) কাছে গিয়ে বলে দাও যে, আমার প্রভু তার প্রভুকে (অর্থাৎ কিসরাকে) আজ রাতে হত্যা করেছেন।”
যখন ইয়ামেনের গভর্নরের কাছে মহানবী (সাঃ)-এর এই উত্তর পৌঁছে তখন সে বলে, “এ ব্যক্তি যেই কথা বলেছে যদি সত্যিই এমন হয়ে যায় তাহলে সে সত্যিই আল্লাহর এক নবী হবে।”
কিছুদিন পর গভর্নরের নামে কিসরার পুত্রের চিঠি আসে যাতে লিখা ছিল, “আমি দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজ পিতাকে হত্যা করেছি।”
এমনই ছিল জীবন্ত আল্লাহর সাথে মহানবী (সাঃ)-এর সম্পর্ক। যার ফলে মহানবী (সাঃ)কে সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালা নিরাপত্তার বেষ্টনিতে রেখেছিলেন।
আসলে আল্লাহতায়ালাকে যারা ভালোবাসেন, যাদের হৃদয় পাক-পবিত্র, তারা যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, তাকে ডাকেন, তার সাহায্য কামনা করেন তখন আল্লাহ তাদের ডাক শুনেন এবং তার সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন।
যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, “এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)।”
তাই আমাদের সবার উচিত হবে এই জীবন্ত আল্লাহর সাথে প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তোলা, তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে জীবন পরিচালনা করা।
আসুন! সব ধরনের অপকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখি এবং আল্লাহর স্মরণে সময় অতিবাহিত করি আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট।
খুলনা গেজেট/এনএম

