খুলনায় পানির চাহিদার ৯৫ ভাগ চাহিদা পূরণ হতো ভূগর্ভের পানি দিয়ে। পানির স্তর দিন দিন নিচে নামতে থাকায় ২০১১ সালে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা ওয়াসা। ‘খুলনায় পানি সরবরাহ’ নামের ওই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে ছিল ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদীর পানি ব্যবহার করা।
২০১৯ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, পানি সরবরাহও শুরু হয়েছে। তারপরও ভূগর্ভের পানি উত্তোলন বন্ধ করেনি ওয়াসা। নতুন করে আরও ৭৫টি পাম্প বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এসব পাম্প দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে।
গবেষকরা বলছেন, যথেচ্ছভাবে ভূগর্ভের পানি তোলায় স্তর প্রতিবছর নিচে নামছে। ওয়াসার এই উদ্যোগে বিপদ আরও বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে গভীর সংকটে পড়বে খুলনার মানুষ।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, ১৫ লাখ মানুষের খুলনা নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। গ্রাহককে প্রতিদিন গড়ে ৬/৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। এর মধ্যে মধুমতী নদী থেকে পানি এনে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪/৫ কোটি লিটার। এ ছাড়া ৩৮টি পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয় দেড় থেকে দুই কোটি লিটার। বাকি পানি নগরবাসী ব্যক্তিগতভাবে বসানো উৎপাদক নলকূপ (পাম্প) থেকে উত্তোলন করেন।
ওয়াসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে ৭৬ হাজার ৬২৮টি ভবনের মধ্যে ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার। নগরীর সম্প্রসারিত এলাকা এবং বাদ পড়া ভবনে পানির সংযোগ পৌঁছাতে পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ওয়াসা। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৭৫টি উৎপাদক নলকূপ বসানো হবে।
ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)-এর ফোকাল পারসন মেঃ কামাল হোসেন বলেন, “এপ্রিল-মে মাসে মধুমতী নদীতে লবণাক্ততা বেশি থাকায় পানি কম সরবরাহ করা হয়। তখন নগরীতে সরবরাহের জন্য দিনে ১০ কোটি লিটার পানি তোলা হবে। বছরের বাকি সময় দিনে ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই কোটি লিটার পানি তোলা হবে। এতে ভূগর্ভের ওপর প্রভাব পড়বে না।”
খুলনার ভূগর্ভের পানি ও পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ, প্রতিবেশ, পানি ও মাটির গুণাগুন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ভূগর্ভের যে অ্যাকুইফার (ভূগর্ভের শিলাস্তর) থেকে মিষ্টি পানি তোলা হচ্ছে, তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই পানি রিচার্জ হতে ৩৫ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে।” তিনি আরও বলেন, “ভূগর্ভের মিঠা পানির স্তর যদি শেষ হয়ে যায়, তখন তা পূরণ করবে নোনাপানি।”
খুলনা গেজেট/এনএম

