নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত গোটা দেশ। আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে পিছিয়ে নেই গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের আড্ডা ও পথে-প্রান্তরে এবং মাঠে-ঘাটের দিনমজুররা।
ডুমুরিয়ার আমভিটা বিল থেকে শাপলা তুলে বিক্রি করে ঘোনা গ্রামের নিতাই মন্ডল। প্রতিবেশি অনেকেই এ কাজের সাথে জড়িত। তারা শাপলা তুলতে তুলতে নির্বাচনী আলোচনাও জমিয়ে তোলে প্রতিদিন। তাদের দাবি নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে ভোটের ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিএনপি ও জামায়াত বিপরীতমুখি অবস্থানে থাকায় নির্বাচন আদৌও হবে কি?
মাছের খাবারের জন্য শামুক ভাঙ্গে চেচুঁড়ি গ্রামের পচি দাসীসহ বেশ কয়েকজন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ কাজটি তাদের করতে হয়। এখানে শুরু হয় রাজ্যের সকল আলোচনা। বাদ যায় না নির্বাচনী বিষয়ও। প্রথম প্রথম তাদের চিন্তায় ছিল ফেব্রুয়ারিতে ভোট হচ্ছে এবং দেশে একটি স্বাভাবিক অবস্থানে আসছে। তবে গতকাল তাদের সাথে কথা হয়। এখন সুর উল্টো। তাদের ভাবনায় দেশ একটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ভোটের পরিবেশ ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে তাদের অভিমত।
মাগুরখালীর আমুড়বুনিয়া গ্রামে চায়ের আড্ডায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় জড়ো হয় পরিতোষ, সুভাষ, কার্তিকসহ বেশ কয়েকজন দিনমজুর। চায়ের কাপে চুমুক দেয় এবং টিভিতে প্রতিদিন খবর দেখে। আর নির্বাচন নিয়ে চালায় তর্ক-বিতর্ক। তাদের মতে, বর্তমান সরকার পড়েছে উভয় সংকটে। ত্রিমুখি চাপে তারা দিশেহারা। বৃহৎ দল বিএনপি চাপ দিচ্ছে দ্রুত নির্বাচনী তফসিলের দিকে যাওয়ার। জামায়াত চাচ্ছে নানা ইস্যুতে নির্বাচন পিছাতে আর এনসিপি জুলাই সনদ প্রশ্নে কোনো ছাড় দিতে চাচ্ছে না। সব মিলিয়ে প্রথম প্রথম ভোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও দিন যত যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে ধুয়াসা তৈরি হচ্ছে বলে তাদের মত।
মির্জাপুর, সাজিয়াড়া, খড়িয়া গ্রামের অমর মন্ডল, বাবু শেখ, ইয়াসিন মোড়ল, আতাউর শেখ, জলিল মোড়লসহ অনেকেই উত্তর বিলে মৎস্য ঘের করেন। ঘের চৌকি দেওয়ার সুবাদে প্রতিরাতে বিলই তাদের আবাস্থল। সবাই রাত ২/৩ টা পর্যন্ত জেগে ঘের পাহারা দেয়। রাতের খাবার শেষে নদীতে ডিঙ্গি নিয়ে সকলে জড়ো হয় থিয়েখালে। শুরু হয় দুনিয়ার রাজনীতি। তাদের অনেকের ধারণা, বর্তমান সরকার যেকোন মূল্যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী ও সমর্থকেরা নির্বাচনী মাঠে দিনরাত কাজ করছে। তাদের দাবি সাংগঠনিক ভাবে আগের থেকে জামায়াত বেশ শক্তিশালী। তবে বিএনপি বড় দল। ভোটও অনেক বেশি। মাঠে আওয়ামী লীগ নেই। ফলে আওয়ামী লীগের ভোট যারাই বেশি টানতে পারবে তারাই ভালো কববে বলে তাদের মত।
মোদ্দাকথা গ্রামের রাস্তা-ঘাটে, মাঠে, বিলে, চায়ের আড্ডায় সকলের মুখে নির্বাচন। তাদের মন্তব্য ফেব্রুয়ারিতে কি ভোট হচ্ছে ? হলে কারা সরকার গঠন করছে। দেশ কি স্বাভাবিক হবে না, আরও অশান্ত হবে? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মধ্যে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত গ্রামাঞ্চলও।
খুলনা গেজেট/এনএম

