হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে ভদ্রা নদীভাঙ্গন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৯নং বোল্ডারের বারোআড়িয়া-ডুমুরিয়া সড়কের বারোআড়িয়া ঠাকুর বাড়ি নামক স্থানে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভদ্রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে গ্রামের অর্ধশত বাড়িঘর, পুকুর, সম্পদ বিলীন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, সড়কের একটি বড়ো অংশ ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চলতি আমন মৌসুমে রাস্তা বিলিন হয়ে গেলে আশেপাশের ফসলি জমি, সবজি খেত ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে এলাকাবাসী। ইতোপূর্বে অর্ধশত পরিবার এই ভাঙনের শিকার হয়েছে, হারিয়েছে তাদের জায়গা-জমি বাড়িঘর। অনেকে এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন শহরে চলে গেছে। ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকে সরকারি রাস্তার পাশে মানবতার জীবন যাপন করছে।
একসময় ঐতিহ্যবাহী গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল বারোআড়িয়া গ্রাম ও হাট-বাজার। যা কালের বিবর্তনে নদী গর্ভে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বারোআড়িয়া-ডুমুরিয়া সড়কটিও রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে-কোনো সময় রাস্তাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
ভাঙন কবলিত এলাকার শিক্ষক ও বারোআড়িয়া ঠাকুর বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি বিশ্বজিৎ পাঠক বলেন, “ভদ্রা নদীর ভাঙনে আমার বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দুর্গা মন্দিরটি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
একই এলাকার কাকন চক্রবর্তী বলেন, “যেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে তার সামনে আমার বাড়ি। ভাঙনের পাশে আমরা ১০-১৫টা পরিবার বসবাস করি। ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারিনা। সবসময় আতঙ্কে থাকি।”
ছাত্রদল নেতা মোঃ মুসা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই নদী ভাঙনের কবলে রয়েছি। বর্তমান ভাঙনের যে অবস্থা যে-কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মধ্যে প্রায় চার হাজার বিঘা ফসলি জমির সম্পত্তি রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।”
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এই নদীভাঙ্গন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। যখন ভাঙন শুরু হয়, ঠিক তখনই তারা ছুটে আসেন। ঝুঁকিপুর্ণ ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শ’ শ’ যানবাহন ও পথচারী যাতায়াত করে। দূর-দুরন্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বারোআড়িয়া বাজারে আসেন ব্যবসা করতে। কিন্তু বর্তমান সড়ক দিয়ে চলাচল একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়কটির পাশেই অবস্থিত শম্ভুনগর, কোদলা, মঠবাড়ি, সুন্দরমহল, জালিয়াখালি, চাঁদগড়, বানিয়াখালি সহ বেশকিছু গ্রাম। এ সকল গ্রামগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অঞ্চলে রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মন্দির সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারি অফিস। বারোআড়িয়া ডুমুরিয়া সড়কে অবস্থিত জালিয়াখালি নামক একটি গ্রাম, নদী গর্ভে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। গ্রামটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে ভদ্রা নদীর কবলে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, “ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বটিয়াঘাটা নির্বাহী অফিসারের সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কারোর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ৪নং সুরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন লিটুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম

