বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
১১ কোটি টাকার কাজ ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে!

কৈয়া-মোস্তর মোড় সড়ক সংস্কারের তিন মাসেই আগের অবস্থায়

জাহাঙ্গীর আলম

১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না হতেই কৈয়া-মোস্তর মোড় সড়ক চলাচল অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় নেই কার্পেটিং, খোয়া ও বালির চিহ্ন। খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তে জমা পানি দেখে মনে হচ্ছে রাস্তায় খুড়ে রাখা হয়েছে সারি সারি ছোট ছোট পাত কুয়ো। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, বটিয়াঘাটা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ এবং ওভার লোডিং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করায় এ রাস্তার এ বেহাল পরিণতি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধদিপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিওবি অর্থায়নে কৈয়া বাজার থেকে রাজবাঁধ পর্যন্ত ২ দশমিক ১ কিলোমিটার রাস্তায় কাজে বরাদ্দ হয় ৩ কোটি টাকা। আর রাজবাঁধ কালভার্ট থেকে ফলইমারী পর্যন্ত ৬০০ মিটার কাজে বরাদ্দ হয় ৮০ লাখ টাকা। ২ দশমিক ১ কিলোমিটার রাস্তায় গেল জুনে কার্পেটিং এর কাজ হয়। ওই কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। বটিয়াঘাটা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার গৌতম কুমার মন্ডল মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করায় ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ তড়িঘড়ি করে শেষ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কিছুদিনের মধ্যে ওই রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।

জুলাই থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। আর খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় বিকল্প হিসেবে এ রাস্তায় ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হয়। যে কারণে অল্প দিনেই এ রাস্তাটির কার্পেটিং উঠে যায়। এখন ওই রাস্তার অধিকাংশ জায়গার খোয়া বালি মাটির অস্তিত্ব নেই। বিশেষ করে কৈয়া বাজারের প্রবেশ দ্বার পরিণত হয়েছে ছোট ছোট পাত কুয়োয়। এখন রাস্তাটি একেবারে চলাচল অযোগ্য। বৃষ্টির প্রভাব শেষ হলেও এ সড়কের পানি এখনও শুকায়নি। এমনকি কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

কাজের মানের ঘাটতির কথা স্বীকার করলেও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অসত্য দাবি করে বটিয়াঘাটা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার গোতম কুমার মন্ডল বলেন, ফাইনাল বিল এখনও দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার পুনরায় কাজ করলে তারপরে বিল দেওয়া হবে।

তবে এলজিইডি’র একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন করে ফাইনাল বিলের আবেদন করেন। ফান্ড আসতে দেরি হওয়ায় ওই সময় বিল দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চলাচল অযোগ্য হওয়ায় মোংলা ও ভোমরা স্থল বন্দরের পন্যবাহী যান চলাচল করায় এ রাস্তার বেহাল দশা।

তিনি বলেন, ওই রাস্তার দু’প্রবেশ দ্বারে সাড়ে ৮ ফুট উচ্চতার গেইট তৈরি করা হচ্ছে। যাতে ভারি যানবাহন চলাচল করতে না পারে। আর ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা সংস্কার না করলে কোন ঠিকাদারকে ফাইনাল বিল দেওয়া হবে না।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অধীনে একই সড়কে (মোস্তর মোড় হতে কৈয়া বাজার অভিমুখি) রাস্তায় ৩.২ কিলোমিটার সংস্কারে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। বছরখানেক গড়িমসির পর চুক্তি অনুযায়ী কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয় বড় বড় গর্তের। এ অংশের অবস্থাও একই রকম। এলাকাবাসী দ্রুত এ সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন