আশ্বিন সংক্রান্তিকে ঘিরে গতকাল শুক্রবার বটিয়াঘাটার ঐতিহ্যবাহী বারোআড়িয়া বাজারে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় জমেছে গুড়ের দোকানে। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য এভাবেই ধরে রেখে প্রতিবছর আশ্বিন মাস যাওয়ার দিন ধান সাধ সংক্রান্তি পালন করে আসছে।
জানা গেছে, বছরে দু’বার আশ্বিন ও পৌষ মাসের শেষ দিন বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালিরা ঘরে ঘরে সংক্রান্তি উৎসব পালন করে।
এই উৎসবের প্রধান উপাদান হলো গুড়, চাল, নারিকেল, তিল, মুড়ি, তেল এবং চিঁড়াসহ অন্যান্য সামগ্রী। তৈরি করা হয়, বাহারি রকমের পিঠা-কুলি, পায়েসসহ নানা রকমের ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী। তাই এ সময়ে গুড়ের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সংক্রান্তির উপকরণ তৈরিতে চিনিমুক্ত আখের গুড়ে স্বাদটা অনেক লোভনীয় করে তোলে।
ভদ্রা নদী তীরে শতবছরের পুরাতন বাজার বারোআড়িয়া। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নদী পথে বহু বছর ধরে এই হাটে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। কিন্তু নদী ভরাট হওয়ার পর থেকে ঐতিহ্যবাহী হাটের সেই জৌলুস অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। সপ্তাহে শুক্রবার হাট বসে। এখানে ব্যবসায়ীরা একসময় বড় বড় কার্গোয় পণ্য আনয়ন করতো। কাঞ্চনগর, মধুখালী, চন্ডিপুর, রেখামারী, মুনকিয়া, লতা, হাড়িয়া, শোলাদানা, জিরবুনিয়া, গেওবুনিয়া, গড়খালি, তিলডাঙ্গা, লক্ষ্মীখোলা, দারুন মল্লিক, কালিনগর, সুরখালি, খড়িয়ালা, কল্যানশ্রী, শরাফপুর, বানিয়াখালি, শিবনগরসহ এতদাঞ্চলের হাজার হাজার লোক আসতো এহাটে। নদী সিলটেড হওয়ার পর হাটের সেই জমজমাট আর চোখে পড়ে না। ২০ একরের উপরে ছিলো হাটের জায়গা। যার অর্ধেক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ হাটে ধান, তিল, চাল ও কাঠের পাইকারি ব্যাপক কেনা-বেচা হতো। নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে, কার্গো, লঞ্চসহ বড় বড় নৌযান আসতে পারে না। যার কারণে হাটটি এখন নিবুনিবু ভাবে চলছে।
গুড় ব্যবসায়ী শরাফপুর গ্রামের রাজকুমার পাল ও সুকুমার পাল জানান, বারোআড়িয়া হাটে একটা সময় ব্যাপক ভিড় হতো। আমরা বহু বছর ধরে এই হাট করে আসছি। অন্যদিনের তুলনায় সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গুড়ের দোকানে ভিড়টা একটু বেশি থাকে। গত হাটে ৪০০ কেজির বেশি গুড় বিক্রি হয়েছে তাদের। ৭০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খেজুর ও আখের গুড়।
বাজারের ব্যবসায়ী কৃষ্ণপদ মন্ডল জানান, নদী ভরাট হওয়ায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী বারোআড়িয়া হাটটি। ভাটার সময় নদীর বুক জেগে ওঠে। সেই সময় ছোট নৌযানও চলার মতো থাকে না। সবমিলে একদিকে হাট অন্যদিকে নদী, উভয় এখন দৈন্য দশায় ভুগছে। অবিলম্বে নদী ড্রেজিংয়ের দাবি জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম

