বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
ঝুলে আছে প্রস্তাবিত ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক মরণফাঁদ, দুর্ঘটনায় লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

জাহাঙ্গীর আলম

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক এখন মরণফাঁদ। অধিকাংশ জায়গায় নেই কার্পেটিং, খোয়া বা বালি। খানাখন্দ আর নালায় পরিণত হয়েছে মহাসড়কটি। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপে রাস্তাটি চলাচলে এখন সম্পূর্ণ অযোগ্য। মোংলা ও ভোমরা স্থলবন্দর ও নিত্য চলাচলকারী হাজার হাজার গাড়ির দীর্ঘ যানজটে নাকাল জনজীবন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে। বিভাগের জনগুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক নির্মাণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় খুলনাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। এদিকে খুলনা সড়ক বিভাগের দাবি ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অধিদপ্তরে। শনিবার ঢাকা থেকে টিম আসছে সরেজমিন পরিদর্শনে।

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের জিরোপয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল পর্যন্ত হচ্ছে ৩৩ কিলোমিটার। ২০২০ সালে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ করে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, জোবা মাটি(সহজে গলে যায়) এবং পানির স্তর রাস্তার সমান হওয়ায় অল্পদিনেই মহাসড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ওভারলোডিং পণ্যবাহী যানবাহন। চলাচল অযোগ্য এ মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে। গেল অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে আরসিসি ঢালাইয়ে। ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ২৩৫০ মিটার নির্মাণ সম্ভব হবে এ বরাদ্দে। জিরোপয়েন্ট থেকে রেললাইনের আগে এবং পরে ১১৫০ মিটার আর চুকনগরে ১২০০ মিটার কাজ হবে এ বরাদ্দের টাকায়। অথচ ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার একেবারে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, এখন ১৭ কিলোমিটার রাস্তা একেবারে খারাপ। এরমধ্যে বেশি খারাপ ৮ কিলোমিটার। ওই ৮ কিলোমিটার রাস্তায় আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গেল ১৩ অক্টোবর পিএমপি মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধি দল খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণে আসছেন। তাদের রিপোর্টের পরে বরাদ্দ হতে পারে এমনটা মনে হচ্ছে।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ৮ কিলোমিটার রাস্তায় আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য ৪টি প্যাকেজে ১’শ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। যেহেতু কার্পেটিং না করে ঢালাই রাস্তার প্রস্তাব করা হয়েছে সে কারণে গেল মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের। শনিবার ঢাকা থেকে দু’জন ত্বত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আসছেন এ মহাসড়ক পরিদর্শনে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হতে পারে।

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে জনদুর্ভোগের ইতিহাস বেশ লম্বা। বিগত সরকারের আমলে চলাচল অযোগ্য এ রাস্তায় দু’দফা সংস্কার হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে শেখ পরিবারের কল্যাণে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কাজ নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করে। কথিত আছে প্রকল্পের মোটা অংশ শেখ পরিবার ও তৎকালিন কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক দিতে হয়। জবাবদিহিতার অভাবে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় অল্প দিনেই রাস্তাটি চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে ২/৩ ঘন্টা লম্বা যানজটের কারণে একদিকে কাচাঁমাল নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে অফিস আদালত ও স্কুল কলেজে কেউ সময়মত পৌঁছাতে পারছেন না। এ রাস্তার জনদূর্ভোগ নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সড়ক বিভাগ বিভিন্ন প্রকার ছবি ও রাস্তার বর্তমান অবস্থা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছে।

নাগরিক নেতারা রাস্তাটি সংস্কারে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি, প্রতিবাদ সভা এমনকি প্রতিকী হিসেবে ওই সড়কে মাছ ছেড়ে এবং ধান রোপন করে প্রতিবাদ করেছেন। এতকিছুর পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ রাস্তা নির্মাণে অনেকটা উদাসীন। যে কারণে খুলনাবাসী দিন দিন ক্ষোভে ফুঁসছে।

খুলনা নাগরিক সমাজের মহাসচিব এড. বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের সাথে মোংলা বন্দর, ভোমরা স্থল বন্দর, বরিশাল, ভোলা এমনকি ঢাকার সাথে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ মহাসড়কের ভালো-মন্দ জড়িত। আমাদের দাবি অতিদ্রুত পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে টেকসই রাস্তা নির্মাণ যাতে হয় তার ব্যবস্থা করা।

খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (কেডিএস) এর সভাপতি আব্দুস সালাম শিমুল খুলনা গেজেটকে বলেন, কংক্রিটের রাস্তা জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু হলেও মাঝে মাঝে গ্যাপ রাখা হচ্ছে। এতে রাস্তা টেকসই হবে না। তাছাড়া ফুটপাতসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে রাস্তা আবারও নষ্ট হবে। তাই আমরা আশা করব সড়ক বিভাগ দ্রুত এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ শুরু করবেন। নইলে খুলনার নাগরিক নেতাদের নিয়ে অচিরেই আন্দোলন শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন