দক্ষিণ জনপদের সীমান্তবর্তী তিন জেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ দেখা দিয়েছে। মেহেরপুর জেলায় প্রতিমাসে গড়ে ২০ জন মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হচ্ছে। বেশি শনাক্ত হয়েছে এ জেলার গাংনী উপজেলায়। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ায় অপর দুটি জেলা হচ্ছে কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর অর্ধ লাখ গরু-ছাগলকে টিকাদান করছে।
আইইডিসিআর এর সূত্রমতে, সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। আগস্ট মাসে ৪৫ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩ জন, অক্টোবরের ১২ তারিখ পর্যন্ত ১৮ জন, সদর উপজেলায় সেপ্টেম্বর মাসে ৫ জনের শরীরে এর উপসর্গ পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, এর জীবাণু মাটিতে ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ঘাস খাওয়ার সময় গরু ছাগলের মুখ থেকে অ্যানথ্রাক্স মানব দেহে প্রবেশ করে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও লোম ঝরা এ রোগে আক্রান্ত প্রাণীর প্রধান লক্ষণ। নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ দল প্রতি মাসে গাংনী পরিদর্শন করছেন।
খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্র জানান, মেহেরপুরের গাংনী ও সদর উপজেলায় আগে থেকেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন করে ছড়িয়েছে। এ দপ্তর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং উপসর্গ দেখা দেওয়া গরু ছাগল জবাই না করা, মাংস বাজারজাতকরণ না করা এবং মৃত পশুকে স্পর্শ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিভাগীয় উপপরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী তাৎক্ষণিক সিভিল সার্জনকে অবহিত করছেন। রোগীদের হাসপাতাল থেকে যথারীতি সরবরাহ করা হয়েছে। মেহেরপুরের সিভিল সার্জনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
প্রাণী সম্পদ বিভাগ খুলনার পরিচালক ডা. মোঃ গোলাম হায়দারের দেওয়া তথ্যানুযায়ি, গাংনীতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ৫০ হাজার গরু ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপদ্রত এলাকা পরিদর্শন করেছে। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি দল মনিটরিং করছে। আক্রান্তের পরিমাণ নি¤œমুখি করার পরিকল্পনা চলছে।
আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক তহমিনা শিরিন গণমাধ্যমে বলেছেন, এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর জীবাণু কীভাবে ছড়িয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও অসুস্থ গবাদি পশুকে চিকিৎসা দিতে পরামর্শ দিচ্ছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য যোগাযোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হক এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, এব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে জনস্বাস্থ্যের সংকট লেগে থাকবে। অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে পরিকল্পিত কোন স্বাস্থ্য যোগাযোগ কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে দেশে প্রাণী ও মানবদেহে প্রথম অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম

