বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
ক্ষুব্ধ সাধারণ নেতাকর্মীরা

বহিষ্কৃত ও বিতর্কিতরা বিএনপি সভাপতির প্রচারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ২০ জুন রাতে নগরীর টুটপাড়া থেকে বিদেশি পিস্তল, একটি রিভলবার, একটি শর্টগান ও বিপুল পরিমাণ গুলিসহ ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন মোল্লা বুলবুল ও ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গত ২৩ জুন সালাউদ্দিন মোল্লাকে অব্যাহতি ও তৌহিদুর রহমানকে বহিষ্কার করে বিএনপি। সম্প্রতি তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

গত রোববার (১২ অক্টোবর) খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনার নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নিতে দেখা গেছে বুলবুল মোল্লাকে।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী নুর আলমকে অপহরণের অভিযোগে গত ২২ মার্চ রাতে খুলনা মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু, জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা ইমন মোল্লাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় ২৩ মার্চ পিয়ারুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা করা হয়। রোববার নগর বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনার সঙ্গে জনসংযোগে অংশ নিতে দেখা যায় পিয়ারুকে। গতকাল সোমবারও সভাপতির সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কৃত অনেক নেতাই নগর বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। বহিষ্কৃত ও বিতর্কিতরা দলের সভাপতির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী বেপারোয়া হয়ে ওঠেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা করে চাঁদাবাজি, দখল, অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুরু করে বিএনপি। শুধু খুলনাতেই প্রায় তিন ডজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। শোকজ করা হয় আরও শতাধিক নেতাকে। ভেঙ্গে দেওয়া হয় খুলনা মহানগর ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি। বিতর্কিত কর্মকান্ডের জেরে খুলনা জেলা বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়।

নেতাকর্মীরা জানান, কিছু অতিলোভী নেতার কর্মকান্ডে নগরীতে বিএনপির ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। দলীয় নেতারা তাদের বার বার সতর্ক করছে। এর মধ্যে বহিষ্কৃত নেতাদের নিজেদের ব্যক্তিগত প্রচারণায় কাজে লাগানোয় নেতাকর্মীরা যেমন ক্ষুব্ধ হচ্ছেন, তেমনটি ওই নেতারাও আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার আশংকা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ১০ অক্টোবর থেকে খুলনা-২ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা শুরু করেন মহানগর বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনা। প্রতিদিনই নগরীতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন তিনি।

গত রোববার তার সঙ্গে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে, ২৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুব উল্লাহ শামীমকে। আওয়ামী লীগ নেতা জেড এ মাহমুদ ডনের পক্ষে ভূমিকা রাখায় চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির পদসহ দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের ওই বিজ্ঞপ্তিতে মাহবুব উল্লাহ শামীমের সঙ্গে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কোনো প্রকার যোগাযোগ না রাখতে বলা হয়েছিল। অথচ দলের মহানগর সভাপতির সঙ্গেই নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন শামীম।

একটি বিতর্কিত ভিডিও ভাইরাল এবং সাধারণ মানুষের বাড়িতে হামলা ও চাপ প্রয়োগের ঘটনায় ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য খায়রুল ইসলাম হিরুকে বহিষ্কার করা হয়। তিনিও সভাপতির সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

সম্প্রতি কেসিসির লিনিয়ার পার্কের নিয়ন্ত্রণ এবং পার্কের সামনে কেসিসির জমিতে দোকান তৈরির অভিযোগ ওঠে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি একরামুল হক হেলালের বিরুদ্ধে। জাতীয় দৈনিকে এনিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ওই দোকান সরিয়ে নেন তিনি। হেলালও শফিকুল আলম মনার সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, বহিস্কৃত লোক নিয়ে কোন প্রচার-প্রচারণা চালায় না। যদি কেউ এসে থাকে তাহলে দায়-দায়িত্ব তার।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন