বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেবো কোথা!

আবদুল কাদের খান

একাউন্টিবিলিটি বা জবাবদিহিতা না থাকলে-সংসার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের আদৌ কোন উন্নয়ন সম্ভব হয় না। সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর গত ৫৪ বছরে কোথাও জবাবদিহিতা বলে কোন কিছুর লেশ মাত্র লক্ষ্য করা যায়নি। সব ক্ষেত্রে ভাব-ভাবনা এরকম ছিল, যায় যাবে সরকারের, তাতে কর্তাদের, আসে যায় কি! কর্তারা ক্ষমতায় বসে আছে, চুরিচামারি লুটপাট করে আখের গোছালেই প্রশান্তি! এমনি ধরনের নিয়মের ধারাবাহিকতায় হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে।

ওই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম হঠাৎ করে তাঁর মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য দেশের দক্ষিণ অঞ্চলীয় জেলা খুলনার ডুমুরিয়াতে আসেন গত ৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায়। নির্মাণাধীন দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র গুলোর নির্মাণ কাজ কেমন চলছে পর্যবেক্ষণ করতে। গত ১১ অক্টোবর খুলনা গেজেট পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে যে বিবরণ পাওয়া গেল, তা সত্যিই অদ্ভুতভাবে বিস্ময়কর। খুলনা গেজেট পত্রিকার প্রথম পাতার খবরে, মিডেল স্থানে শিরোনাম ছিল: ‘ডুমুরিয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কাজ স্থগিত। আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনে নেই কোন সিঁড়ি!’ সব মিলে এই এলাকায় ‘দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও উন্নয়ন’- শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খুলনার সবচেয়ে বড় উপজেলা ডুমুরিয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নির্মাণাধীন ৮ নম্বর শরাফপুর ইউনিয়নের শরাফপুর উলুম কওমি মাদ্রাসা দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রে বরাদ্দ ২ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, একই এলাকার ১৪ নম্বর মাগুরখালী ইউনিয়নে অবস্থিত স্বর্ণদ্বীপ দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে বরাদ্দ ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও শিবনগর খেয়া ঘাটের দক্ষিণ পাশে দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে বরাদ্দ ৬ কোটি ৯৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সব মিলে টাকার অঙ্ক তো একেবারে কম নয়।

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলাম, এজন্য গ্রামীণ উন্নয়ন অবকাঠামোর পরিদর্শনে সচরাচর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এমন হাইপ্রোফাইল উপদেষ্টাকে ইতঃপূর্বে কখনো গ্রামে আসতে দেখা যায়নি।

উপদেষ্টা মহোদয় সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে দেখতে পান কাজের গুণগতমান মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে ভবনের ছাদে উঠার সিঁড়ি না রাখায় নকশা ও পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মত দেশে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প তৈরির সময় যথেষ্ট গবেষণা ও পরিকল্পনার অভাবে এত বড় ভুল হয়েছে। সিঁড়ি অভাবে প্রায় কানা খোঁড়া এই বিল্ডিংটি ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য এখনি জরুরি ভিত্তিতে একটি সিঁড়ি প্রয়োজন। কিন্তু সরাসরি ওটি হবে কীভাবে? তাই পরবর্তীতে তিনি বলেন, টি আর প্রকল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে ভবনের ছাদে উঠার জন্য আপাত স্টিলের সিঁড়ি নির্মাণ করে বিল্ডিংটিকে গতিশীল করতে হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিল্ডিং গুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করারও জরুরি নির্দেশ দেন।

মজার ব্যাপার, দায়িত্ব জ্ঞান শূন্য নকশা ও পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের জ্ঞানের বহর এমন যে একটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে, অথচ তার ছাদে উঠার সিঁড়ি নাই। বিচিত্র কাণ্ড!

এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় যেখানে আপামর গণমানুষের কল্যাণে দেশের উপকূল অঞ্চলে দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য সুরক্ষার জন্য দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করছে, তারই নির্মাণ কাজে নকশা ও পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের ৯/৬ কর্মকাণ্ড বলা চলে ক্ষমার অযোগ্য ধৃষ্টতামূলক অপরাধ! এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শেল্টার বা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তারই নির্মাণ দশা যদি এমনই জগাখিচুড়ি হয়, তাহলে ভাবতে হবে ওরা কতটা স্বেচ্ছাচারী হলে এমনটি হয়। শুধু তাই নয়, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে এই বিল্ডিংগুলো এলাকার গণমানুষের জন্য নানা সামাজিক কাজে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এগুলোয় কি তাহলে এ ধরনের গাঁজাখুরিভাবে নকশা ও পরিকল্পনা করার স্বেচ্ছাচারীতা দেখানো যায়?

উপদেষ্টা মহোদয় এসেছিলেন সরেজমিনে দেখতে, দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র গুলোর নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা বা এর নির্মাণ পরবর্তী সুফল জনগণ অর্থাৎ সাধারণ মানুষ কতটা পাবে সেটি দেখতে এসে স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে মতবিনিময়কালে এর সুফল তুলে ধরে উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রটি স্থানীয় মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে থাকবে, আর স্থানীয় এলাকাবাসী সবাই এর উপকারভোগী হবে। এই প্রকল্পগুলোর কর্মকা- থেকে একটি সত্য স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে এই ভবনগুলো নির্মাণে এ ধরনের গাফিলতি হর হামেশাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার এ ব্যাপারে তেমন কোনো লক্ষ্য নেই।

বলা বাহুল্য, উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান, খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান, স্থানীয় ইউএনও মোহাম্মদ আল-আমিন, জেলা ত্রাণ ও প্রবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল করিম, থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদ রানা, উপজেলা পিআইও এস এম আব্দুল্লাহ বাইজিদ, মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমান, ঠিকাদার মিজানুর রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এত এত হাই প্রোফাইলের কর্মকর্তা উপদেষ্টা মহোদয়ের পাশে ছিলেন, অথচ প্রকল্পটি ৯/৬ ভাবে যখন সম্পাদিত হয়েছে তা তদারকির ব্যাপারে বড়ই গাফিলতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।

এখানে যে-সব কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মহোদয়ের উচিত ছিল ওদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, কীভাবে একটি প্রকল্প নকশা ও পরিকল্পনা ছাড়া ঘোড়ার আগে গাড়ি চলার মত সম্পন্ন হল?

আমাদের দেশে জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের পূর্বে শুধু প্রকল্প গ্রহণ আর লালফিতার দৌরাত্ম্য ঘুস দুর্নীতি সমানতালে চলেছে। দেশটি এখন বাক্ সর্বস্ব উন্নয়নের আওতায় প্রায় তলা ছেঁড়া ঝুঁড়ির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। উপদেষ্টা মহোদয়ের অসন্তোষ প্রকাশ এবং পরবর্তী উপদেশগুলো যদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে রাখেন, তাহলে অবশ্যই দেশের জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু আমাদের দেশে একটা নিয়ম রয়েছে, হাই প্রোফাইল কর্মকর্তা যখন হাজির হন, তখন বহু পর্যবেক্ষক থাকে তারা শুধু জি হুজুর হ্যাঁ হুজুর মুসাহেবি করার জন্য! কিন্তু বাস্তব কাজের সময় ডানহাত বাহাত কারবার ছাড়া একজনকেও চোখে মেলে না। এ ধরনের অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। দেশের সাধারণ মানুষের বাজেটের টাকা খরচ করে কানা খোঁড়া প্রকল্প গ্রহণ কোনো মতেই বরদাস্ত করা যায় না। জেলা প্রশাসক, ইউএনও সহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের এই ঘটনা থেকে অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার।

প্রজাতন্ত্রে যারা চাকরি করেন, তাদের মনে রাখা উচিত, “They are the public servant”

এইসব পাবলিক সার্ভেন্টদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। রাষ্ট্রের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা চাকরি করেন, তাদের শুধু গা দেখানো সন্তুষ্টির জন্য এইসব চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয় নাই। কথাগুলো মনে রাখতে হবে।

দক্ষ রাঁধুনি ভাত রান্নার সময় হাঁড়ির একটি ভাত টিপ দিলেই বুঝে ফেলবেন সবগুলো ভাত অর্থাৎ হাড়ির সবগুলো চাল সিদ্ধ হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয় এদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে, জনগণের কল্যাণমূলক প্রকল্পে। এরপরও যদি এদের হুঁশ না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, এরা শুধু ব্রিটিশ আমলের মত সাধারণ মানুষের উপরে জুলুমের ছড়ি ঘোরানো ছাড়া, হয়রানি করা ছাড়া কিছুই বোঝে না।

একটি উৎসাহব্যঞ্জক খবর। খুলনা জেলার সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের খবর। বন বিভাগের নাকের ডগায় বন বিভাগের চোখে ধুলো দিয়ে হরিণ শিকার করে এক দুই কেজি নয়, ৪৪ কেজি হরিণের মাংস ফ্রিজে ভর্তি করে রেখেছে স্থানীয় এক যুবক। অবশেষে কয়রা থানার পুলিশ ও নৌ বাহিনীর যৌথ অভিযানে ৪৪ কেজি হরিণের মাংস সহ সেলিম হাওলাদার নামে এক যুবককে আটক করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আটক ব্যক্তির ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের মৃত এইচ এম শওকত হোসেনের ছেলে। গত ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে অভিযান চালিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আটক ব্যক্তির বাড়ির ফ্রিজ থেকে ৪৪ কেজি হরিণের মাংসসহ আটক করে।

যৌথ বাহিনী নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে গোপনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকস্মিকভাবে এ অভিযান চালিয়ে ওই হরিণের মাংস উদ্ধার করে। কয়রা থানার এসআই তারিক মাহমুদ এমনটি জানিয়েছেন।

জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় যারা এই বনের হরিণ অবাধে শিকার করে এদেরকে চিহ্নিত করা দরকার। যাকে আটক করা হয়েছে রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে নেপথ্যের বড় সিন্ডিকেট বা নেটওয়ার্কটি চিহ্নিত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর চোর দুর্বৃত্তরা এভাবে হরিণ শিকারের মাধ্যমে বন উজাড় করার যে মহড়া চালাচ্ছে এ ব্যাপারে সরকারের বন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে নজরদারি নিষেধাজ্ঞা এবং তৎপরতা না চালালে আস্তে আস্তে সুন্দরবন হরিণ শূন্য হয়ে যাবে। আমি জানি না, লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর বন বিভাগ হয়ত একটু নড়ে চড়ে বসবেন কিন্তু এই জটিল রোগটি ক্রনিক আকারে বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এর দেখার কি কেউ নেই? সেলিম হাওলাদার কোনস্পর্ধায় ৪৪ কেজি হরিণের মাংস গোপনে হরিণ শিকারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করলো বিষয়টি জেলা গোয়েন্দা সংস্থার উচিত হবে কঠিনভাবে খতিয়ে দেখা। সুন্দরবনের হরিণ অভাবে শিকার করার ঢালাও সার্টিফিকেট বা অনুমতি ওদেরকে কে দিয়েছে এখনই জিজ্ঞাসাবাদের সময়। স্থানীয় নৌবাহিনী ও কয়রা পুলিশের প্রশংসনীয় তৎপরতায় আমরা যেমন খুশি হয়েছি, অনুরূপভাবে এর শিকড় উৎপাটন করতে হলে অবশ্যই সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সি গুলোকে আপোশহীনভাবে অত্যন্ত কঠিন তৎপরতা চালাতে হবে।

বন বিভাগের কর্মকর্তা নামীয় সরকারি বেতনের এক ধরনের প্রাণী রয়েছে, যারা বন উজাড়ের নেপথ্য কাণ্ডারি বলে দুষ্ট লোকেরা হর হামেশা বলাবলি করছে। জানি না ঘটনা কতটা ঠিক, তবে বন বিভাগে কর্মরত লোকদের, কর্মকা- যে মোটেও পজিটিভ নয়, এই একটি ঘটনা থেকে পুরো বনের বর্তমান অসহায় অবস্থার চিত্রটি এক পলকে ফুটে উঠলো। বন মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে, বিশ্বের স্মরণীয় ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য অবশ্যই কঠিন নজরদারি অব্যাহত রাখা। বনে যে ধরনের জনবল রয়েছে তার দ্বারা কি সত্যি কোন পজিটিভ কাজ হচ্ছে? কর্তৃপক্ষ বুকে হাত দিয়ে হাজারো দিব্যি করে বললেও আমরা বলতে পারি কোথায় যেন একটা বজ্রয়াটুনি ফসকা গিরো রয়ে গেছে। আমরা তো জানি ফুটো কলসে পানি রাখলে কলস পানি শূন্য হয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তেমনি বন বিভাগের চাকরিতে যারা আছেন তাদের অবস্থা বললে হা…হা…হা… হাসি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না। পাগল ছাড়া সাধারণ বুদ্ধির প্রায় সবাই বলবেন, যে বন বিভাগে যারা কর্মরত তাদের নেপথ্য ইশারায় এসব কাজগুলো কুৎসিতভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বন বিভাগের সাথে নেটওয়ার্ক রেখে এ ধরনের কাজ যারা করে এদেরকে আইনের আওতায় এনে কড়া জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি বিধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

কথায় বলে না, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেবো কোথা!’ বন বিভাগ এবং সেখানে যে-সব বড় কর্তারা আছেন তারা অবাধে গোপনে হরিণ শিকারের অলিখিত লাইসেন্স দিয়ে কেন এ সর্বনাশটি করছেন আমাদের অবশ্যই মনে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ কপালে এইসব বন কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত বা চিরতরে বরখাস্ত করা একান্ত জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলতে হবে, বেড়া দেওয় হয় খেতের ফসল ঠেকানোর জন্য। সেই বেড়া যদি খেত খায়, তাহলে বেড়া দিয়ে আর কি দরকার?

ছোট্ট দুটি খবর দিয়ে এ কথাটি বলতে চেয়েছি, আমাদের নজরদারি আমাদের তদারকি কত যে ঢিলেঢালা তার উজ্জ্বল নজির আজকের কাহিনি আদ্যোপান্ত বিবরণটি। বিষয়টি অনেকে মনে করতে পারেন সাদা চোখে সামান্য ব্যাপার, কিন্তু এর গভীরে যে ভয়াবহ ক্ষতটি লুকানো আছে, তার ক্যান্সারের ভয়াবহ জার্মের থেকেও ভিতিপ্রদ। আমরা চাইবো, বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে, গভীর অনুসন্ধানী চোখ নিয়ে দেখলে, সুন্দরবনের নেপথ্যে যে-সব চোরেরা, দুর্বৃত্তরা বন নিধনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদেরকে আস্তে আস্তে পাকড়াও করা এবং বনের ভেতরের এ ধরনের কুৎসিত কলঙ্ক দূর করা শুধু সামান্য তৎপরতা বাড়ালে সম্ভব হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এবং বন বিভাগ এভাবে তীর্যক দৃষ্টি রাখলে পৃথিবীর সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন নষ্ট হাতের উপদ্রব থেকে অবশ্যই অবশ্যই রক্ষা পেত।

আমি যেহেতু আইন প্রশাসনের কেউ নই, তাই আমার আক্ষেপ করে, বলতে হচ্ছে :
চোখ খোলা রাখি, মন ভালো নয়,
কি আর বলিব আমি!
আপনারাই মতামত জানাবেন
kaderkhan1951@gmail.com

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন