বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

মধুমতি ও নবগঙ্গা গিলে খাচ্ছে বাজার ও রাস্তাঘাট, দিশেহারা মানুষ

এসকে সুজয়, নড়াইল

মধুমতি ও নবগঙ্গা দু’নদীর তীব্র ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। একদিকে লোহাগড়ার জয়পুর ইউনিয়নের মৌলভী ধানাইড়-মরিচ পাশা আঞ্চলিক সড়ক ভাঙনের মুখে, অন্যদিকে নবগঙ্গার ভাঙনে কালিয়ার পারবিঞ্চপুর বাজারের একাধিক দোকানঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), তবে স্থানীয়দের দাবি অস্থায়ী নয়, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া নড়াইলকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মধুমতি নদীর পাড়ঘেঁষা জয়পুর ইউনিয়নের চাচই ও ধানাইড় এলাকায় আঞ্চলিক সড়কের বেশ কিছু অংশ ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে।

স্থানীয় কৃষক ওহিদার রহমান জানান, “হঠাৎ করে মধুমতির ভাঙনে আমাদের যোগাযোগের এই প্রধান সড়কটি নদীতে মিশে যেতে বসেছে। প্রতিদিন ভয় নিয়ে চলাচল করছি। এখনো কিছুটা আশা আছে, কারণ পাউবো দ্রুত কাজ শুরু করেছে।”

চাচই গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হুদা বলেন,“অস্থায়ী বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে, কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করলে এই রাস্তা একদিন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। হাজারো মানুষ তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।”

ধানাইড় গ্রামের কৃষক রহিম মোল্লা বলেন,“ভাঙনে শুধু রাস্তা বা দোকান হারায় না, হারায় আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা। বছরের পর বছর ক্ষতির মুখে থেকেও আমরা আশার আলো দেখি না।”

অন্যদিকে, কালিয়া উপজেলার পারবিঞ্চপুর এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এক রাতেই অন্তত ১০টিরও বেশি দোকানঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। চা, মুদি, কসমেটিকসসহ ছোট ব্যবসায়ীরা এখন পথে বসেছেন।

স্থানীয় নারী ব্যবসায়ী দিলরুবা বেগম। যার চায়ের দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,“বছরের পর বছর এই দোকান দিয়ে সংসার চলত। হঠাৎ করে সব নদীতে চলে গেছে। এখন ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিবো কিভাবে?”

একই গ্রামের দোকানদার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,“প্রতি বছরই ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী কাজ হয়, কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই আবার সব ভেঙে যায়। স্থায়ী বাঁধ ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কৃষক পরিবারগুলো বলছেন, প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতে নদী ভাঙন শুরু হয়, অথচ স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরই তাদের ঘরবাড়ি, ফসল ও জীবিকা নদীতে হারিয়ে যায়।

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন,“লোহাগড়ার চাচই ও ধানাইড় এলাকা এবং কালিয়ার পারবিঞ্চপুর দু’জায়গাতেই ভাঙন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। ভাঙনের গতি কিছুটা কমে এসেছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “নদী ভাঙন এখন মৌসুমি সমস্যা নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেরও অংশ। আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে এই এলাকাগুলোকে টেকসইভাবে রক্ষা করা যায়।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন