বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সোমবার (৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচিত ২৫ পরিচালকের মধ্যে খুলনা বিভাগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক রাজ। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি খুলনায় ঘরোয়া লিগ আয়োজন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর পথ তৈরিসহ নানা লক্ষ্য স্থির করেছেন।
এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে পথচলা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে বিসিবির নির্বাচক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রাজ্জাক। সেই পদ ছেড়ে এবার সরাসরি যুক্ত হলেন বিসিবির ২৫ সদস্যের পরিচালনা পরিষদে। নতুন ভূমিকায় নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানা বিষয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে।
বিসিবিতে নতুন দায়িত্ব পেলেন, কেমন লাগছে?
রাজ্জাক : আলহামদুলিল্লাহ, আমরা তো আসলে ক্রিকেটের মানুষ। যেখানেই থাকি না কেন ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা সবসময়। চেষ্টা থাকবে সেভাবেই এগিয়ে যাওয়ার। অতীতে যেমন ক্রিকেটার এবং এরপর নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছি, এখন সেই সুযোগটা আরও বেশি। দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো কাজ করার চেষ্টা থাকবে।
ঠিক কোন পরিকল্পনা থেকে বোর্ডের দায়িত্বে এলেন?
রাজ্জাক : আমি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম তখন একভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এরপর নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি ভিন্নভাবে। সেসবের চেয়ে পরিচালক হিসেবে দায়িত্বটা আরও অন্যরকম হতে পারে। এখনও কাজ শুরু হয়নি, হলে বিস্তারিত বোঝা যাবে। আগের চেয়ে বড় আকারে হয়তো কাজ করা যাবে। বড় পরিসরে কাজের চিন্তা করেই আসা আরকি।
ক্রিকেট বোর্ডে কাজ করার সিদ্ধান্তটা একটু কঠিন ছিল কি না…
রাজ্জাক : হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদের ক্রিকেটটাই কিন্তু সবকিছু। অর্থ উপাজনের পাশাপাশি আমাদের পেশাও বটে। সেই জায়গা থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু দিন শেষে আমি সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, এ ছাড়া সাধারণত বেশিরভাগ সিদ্ধান্তের জন্য যাদের সঙ্গে কথা বলি, সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছেন। তারা আমাকে বলেছেন, আমি যেহেতু কাজ করতে চাই সেক্ষেত্রে এটা ভালো সুযোগ। আশা করি আগের চেয়ে আরও ভালো কাজ করতে পারব।
আপনি খুলনা বিভাগ থেকে পরিচালক হয়েছেন, সেখানে প্রায় এক দশক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয় না…
রাজ্জাক : খুলনায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে হলে এই মুহূর্তে (ভালো মানের) একটা হোটেল খুব দরকার। আরেকটা হচ্ছে মাঠের সুযোগ-সুবিধা। এটা যত ভালোভাবে সাজানো যায়। আমি নিশ্চিত যে এনএসসি থেকে এই কাজগুলো করে থাকে, যতটুকু জানি তারা উদ্যোগ নিয়েছে। হোটেলটা তাড়াতাড়ি হলে…যদিও এটা তাদের দায়িত্ব না। মাঠের যে দায়িত্ব…আমি শুনেছি এর জন্য ভালো বাজেট হয়েছে। এটা অগ্রগতি হচ্ছে। আমি আশাবাদী যে খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে খেলা শুরু করা যাবে।
খেলা শুরুর ব্যাপারে নিদিষ্ট সময়সীমা বা পরিকল্পনা আছে কি না
রাজ্জাক : কবে খেলা শুরু হতে পারে এটা এখনই বলতে পারব না। কেননা এর জন্য টেকনিক্যাল ব্যক্তিটা আমি নই, খেলা শুরু-শেষ নিয়েও নির্দিষ্ট সময় জানাতে পারবে তারা। এটা আসলে আমার বলার কথাও না, যত তাড়াতাড়ি (মাঠের কাজ) শেষ হবে, তত দ্রুত খেলা শুরু হবে।
আপনি নিজে খুলনা বিভাগের, যেখান থেকে অতীতে অনেক ক্রিকেটার এসেছে। গত কয়েক বছরে তা কমতির দিকে। এ দিকটাতেও নজর রাখবেন নিশ্চয়ই?
রাজ্জাক : বৃহত্তর দিক চিন্তা করতে হবে অবশ্যই। একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমি চাইব আমাদের দলটা যাতে ভালো হয়, তা খুলনা থেকে আসুক কিংবা চট্টগ্রাম-রাজশাহী-সিলেট যেখান থেকেই হোক। যেহেতু আমি খুলনার মানুষ ও নতুন দায়িত্বে, সেক্ষেত্রে আমার কিছুটা আলাদা দৃষ্টি তো থাকবেই। যত বেশি ক্রিকেটার আসবে ও ভালো খেলবে এটাই প্রত্যাশা। আমাদের কাজ করার যে সুযোগ থাকবে অবশ্যই উন্নয়নমূলক কিছু করব।
খুলনা বিভাগসহ সব জেলার লিগ বন্ধ, এটা পুনরায় চালু করতে কী উদ্যোগ নেবেন?
রাজ্জাক : এটা (লিগ চালুর চেষ্টা) কিন্তু অনেক আগে থেকেই করেছি, এখন না শুধু। আগে যখন যে অবস্থায় ছিলাম খোঁজ-খবর রাখতাম যে লিগটা কবে-কীভাবে চালু করা যায়। যদি দ্রুত চালু করা যায় ততই ভালো, এটার জন্য আসলে মোটিভেশন দরকার। প্রত্যেকটা বিভাগ ও জেলাকে মোটিভেট করতে হবে। ক্লাবগুলোকে আগের ধারায় ফেরাতে চেষ্টা চালাতে হবে। ছোটবেলায় আমরা যেভাবে খেলেছি, প্রত্যেকটা জেলায় সেভাবে করতে চাই। অনেক বছরের গ্যাপ হয়েছে, এটা ইনশাআল্লাহ আবার শুরু হবে। চেষ্টা করব লিগগুলো যেন আবার মাঠে গড়ায়।
নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়েছেন এই নির্বাচনের আগে। সেই দায়িত্বে থাকাকালে অপূর্ণ কোনো আক্ষেপ আছে কি না…
রাজ্জাক : আল্লাহর রহমতে কোনো আফসোস নেই। আমার রিসোর্সে যা ছিল, আমি তাই করেছি। আমি আমার সেরা কাজটা করেছি। নির্বাচকদের জায়গাটা এমন না যে সব মানুষ একসঙ্গে খুশি হবে। এই জায়গা নিয়ে আসলে খুব বেশি বলার নেই। কিন্তু আমি যেমন ছিলাম আমার ভেতর থেকে যেটা আসছে সেটা আমি সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করেছি। যেটা করতে চেয়েছি তা পেরেছি।
বিসিবির নির্দিষ্ট কোন বিভাগের দায়িত্ব নিতে চান বা আগ্রহ আছে?
রাজ্জাক : আমি অবশ্যই চাইব সরাসরি ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কিছু যেন করতে পারি। এই মুহূর্তে নাম বলতে পারব না, তবে যেন মাঠের সঙ্গে থাকতে পারি, খেলোয়াড় মানুষ আমরা। যতটা সম্ভব ক্রিকেট ও মাঠের কাছাকাছি যেন থাকতে পারি, তা যাই হোক না কেন।
নতুন বোর্ড দায়িত্ব নিলো, নিশ্চয়ই ক্রিকেটের অপূর্ণ অনেক লক্ষ্য পূরণ হবে। যা হয়তো আমাদের অধরা ট্রফি ধরা দিতে ভূমিকা রাখবে…
রাজ্জাক : এটা যে কারো সময়ে হতে পারে, আমার দায়িত্ব থাকালে কিংবা পরেও হতে পারে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রত্যেকটা মানুষের কিন্তু কিছু না কিছু অবদান আছে। সেই শুরু থেকেই যত মানুষ এসেছে সবার সময় কিছু না কিছু জোড়া লেগে আজকে বাংলাদেশ এখানে এসেছে। এখন বাংলাদেশ যত দ্রুত ট্রফি বা বড় সাফল্য আনতে পারে সেটাই চাওয়া। আমার সময়ে হলে ক্রেডিট সব আমার বা আমাদের হবে এরকম না। এটা একটা চেইন সিস্টেম।
খুলনা গেজেট/এএজে

