বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

বাজারে সার সংকট : চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

গাজী আবুল হোসেন, নওয়াপাড়া

চলতি আমন মৌসুমে সার সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সার সরবরাহ না থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। বিশেষ করে টিএসপি ডিএপি ও এমওপি সারের সরবরাহ ঘাটতি থাকায় দিশেহারা হাজারো কৃষক। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে ধানের বিবর্ণ শিষ গঠন ও দানা পরিপক্কতার ক্ষেত্রে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমন আবাদের এই শেষ সময়ে সময় মত চাহিদা অনুযায়ী সার না পেলে উৎপাদনে বড় ধরনের ধ্বস নামবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে সার সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ কৃষি কর্মকর্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে সময় মতো সার আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এর আগে দেশের চাহিদার ৭০ ভাগ নন ইউরিয়া সার বেসরকারিভাবে আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা হতো। তখন সার সংকট ছিল না। তাছাড়া প্রতিযোগিতা মূলকভাবে দ্রুত আমদানি কারকরা কৃষকদের কাছে সার সময়মতো পৌঁছে দিত। এখন জিএস টু এর মাধ্যমে ৭০ ভাগ সার আমদানি হচ্ছে। আর মাত্র ৩০ ভাগ বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। জিএস টু জি এর মাধ্যমে আমদানিকৃত সার বিএডিসির সংরক্ষণে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। এতে করে সুষ্ঠু ভাবে সঠিক সময়ে বিভিন্ন জেলায় সার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জেলায় আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমি ইতোমধ্যে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর সার সংকট কৃষকদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে জেলায় ইউরিয়া সারের চাহিদা ৪৭ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন। সেখানে বরাদ্দ এসেছে ২৫,১৪৪ মেট্রিক টন। টিএসপির চাহিদা ১৩,৮৪৩ মেট্রিক টন। বরাদ্দ এসেছে ৪ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন। এছাড়া ডিএপি ও এমওপির বিপরীতে বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক।

কৃষকদের অভিযোগ, এখনই শেষ সময়ে জমিতে সার প্রয়োগ না করলে ফলন ভালো হবে না, ফলন হবে কম। বিপদে পড়তে হবে আমাদের। যেখানে এক বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের জন্য যে পরিমাণ সার প্রয়োজন চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে না। আবার বিঘা প্রতি ডিলাররা সার দিচ্ছে ১০ কেজি করে। চলতি মৌসুমে সময় মত চাহিদা অনুযায়ী সার না পেলে এবং যথাসময়ে আমন মৌসুমে জমিতে সার প্রয়োগ না করলে ব্যাপকভাবে ফলন ব্যাহত হবে। আর উৎপাদন কম হলে বাজারে চালের দাম বাড়বে। ফলে শুধু কৃষকরাই নয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ জনগণ।

অভয়নগরের কৃষক সাহাজাহান বলেন, “সার সংকটের কারণে চাষাবাদ নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছি। সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সার বিক্রি করার কথা কেজি ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ এবং এমওপি ২০ টাকা। অথচ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ইউরিয়া ২৮ টাকা, টিএসপি ৪০ টাকা, ডিএপি ২৪ টাকা দরে।”

অভয়নগর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ ও নাজিম উদ্দিন বলেন, “সার সংকট রয়েছে। দামও চড়া। সময়মতো সার দিতে না পারলে চাষাবাদে সমস্যায় পড়তে হবে।”

প্রেমবাগ ইউনিয়নের সার ডিলার সর্দার মোবারক হোসেন বলেন, “সারের ঘাটতি নেই। তবে এলসি’র মাধ্যমে টেন্ডারের সার আসতে দেরি হলে সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সভাপতি, অভয়নগর উপজেলা খাদ্যশস্য ও সার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, “সার আমদানিতে টেন্ডার আহবান করতে বিলম্ব হওয়ার কারণে সার সংকট দেখা দিয়েছে। সঠিক সময়ে টেন্ডার করলে এই অবস্থা হতো না।”

এদিকে কৃষি বিভাগ বলছেন ভিন্ন কথা। তারা সার সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ।

অভয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, “অভয়নগরে সারের কোন সংকট নেই। কোন ডিলার যদি সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রয় করেন তাহলে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, “সারের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুদ আছে।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন