বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

প্রবাসী স্বামীর সাথে ঝগড়া করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

কিছুদিন পরই সন্তানদের নিয়ে আমেরিকায় স্বামীর কাছে যাওয়ার কথা ছিল গৃহবধূ ঝর্ণা বেগমের (৩৫)। অথচ সেই স্বামীর সাথেই ঝগড়া করে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী গ্রামের নিজ বাড়িতে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন ঝর্ণা বেগম। ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিন তেলের বোতল ও লাইটার উদ্ধার করেছে পুলিশ।

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত ঝর্ণা বেগম কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান তালুকদারের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জননী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করায় ঝর্ণা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। রবিবার সকালে উভয়ের মধ্যে ঝগড়ার পর বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ধোঁয়া বের হতে দেখে পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ঝর্ণা বেগম বড় ছেলে হাফেজ সাকিব তালুকদারকে (১৮) নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। ছোট ছেলে ইউসুফ তালুকদার (১০) বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামে একটি মাদরাসায় হেফজ বিভাগে লেখাপড়া করে।

প্রতিবেশী শাওন বলেন, আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে কাকির (ঝর্ণা বেগম) রুম থেকে ধোয়া বের হচ্ছিল। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় রুমের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে দেখি শুধু ধোয়া বের হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাংস পোড়া গন্ধ। পরে আশেপাশের লোকজন নিয়ে শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখি পুরো শরীর পুড়ে ফ্লোরে লেপ্টে রয়েছে।

ঝর্ণা বেগমের বড় ছেলে হাফেজ সাকিব তালুকদার বলেন, বাবা প্রায় ১০ বছর ধরে আমেরিকায় আছেন। গত বছর সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন। মা, আমি ও ছোট ভাই ইউসুফ তালুকদারের পাসপোর্ট বাবা নিয়ে গেছেন। আমি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।

আর কিছুদিন লাগবে শেষ হতে। এরপরই আমাদের আমেরিকায় চলে যাওয়ার কথা। সেখানে বাবা ছাড়াও ৩ চাচা ও এক ফুফু তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। মা কেন যে এমনটা করলো আমরা বুঝতে পারছি না।

ঝর্ণা বেগমের প্রতিবেশী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মাসুদ তালুকদার বলেন, ঝর্ণা বেগম এলাকায় সকলের বিপদে-আপদে সহযোগিতা করতেন। ঝর্ণার স্বামী, দেবর, ভাসুর, ননদ সকলেই পরিবারসহ দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় রয়েছে। এই পরিবারটি সকলের কাছেই খুব প্রিয় ছিল। এমন পরিবারে এই দুর্ঘটনা বেদনাদায়ক। পুরো এলাকার মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েছে।

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, দুপুরে খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আগুনে ঝর্ণা বেগমের শরীরের প্রায় ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে ও চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। আত্মহত্যার কারণ জানা যায়নি।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হয়ত কোনো অভিমানে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগও দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এমআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন