জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে পাঁচ দলের অভিন্ন কর্মসূচি

গেজেট প্রতিবেদন

জুলাই সনদের আইনি-ভিত্তি প্রদান ও সে অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন সহ বিভিন্ন দাবিতে অভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি ইসলামী দল। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ, ১৯ সেপ্টেম্বর সব মহানগরী বা বিভাগ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ।

সূত্রমতে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতিতে পুরো নির্বাচন এবং বাকিরা উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন চায়। এছাড়া অন্যান্য দাবি প্রায় অভিন্ন।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং খেলাফত মজলিস। এর আগের দিন রোববার এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। নেজামে ইসলাম পার্টি মঙ্গলবার একই কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া খেলাফত আন্দোলনও এই কর্মসূচির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে। কর্মসূচি পালনের বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় দলটির এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও কিছু দল আগামী এ ধরণের কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন।

জামায়াতের ৫ দফা দাবি:

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে ৫ দফা দাবিতে তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

দলটির দাবির মধ্যে রয়েছে-

১. জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা

২. আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা

৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা,

৪. ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।

৫. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা

ইসলামী আন্দোলন:

সোমবার দুপুর একটায় পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবিতে তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

দলটির দাবিগুলো হচ্ছে-

১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।

২. নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।

৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।

৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।

খেলাফত মজলিস:

সোমবার দুপুর দুইটায় পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের।

দলটির দাবিগুলো হচ্ছে-

১. অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করা ও এর আইনি-ভিত্তি দেয়া। ঘোষিত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারি ২০২৬ এর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।

জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ এর আইনী ভিত্তি প্রদানের জন্য দলটির প্রস্তাবনা হচ্ছে-

ক. জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ স্বাক্ষরের পর দুই মাসের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ-২০২৫ কে সাংবিধানিক ও আইনী মর্যাদা বা বৈধতা প্রদান করা।

অথবা খ. জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় পলিসি বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্ডিন্যান্স বা নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা। আর সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির Proclamation তথা সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে আশু কার্যকর করা তবে শর্ত হচ্ছে যে, আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোন পরিবর্তন- পরিবর্ধন ছাড়াই সেগুলো Ratify (আনুষ্ঠানিক অনুমোদন) করতে সংসদ সদস্যগণ বাধ্য থাকবেন- এ মর্মে সকল দল ও পক্ষের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা।

২. পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য নির্বাচন করা।

৩. আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের অপরাধের বিচার দৃশ্যমান করা।

৪. আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।

৫. নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র, পেশী শক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস:

গত রোববার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

১. অবিলম্বে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করা।

২. আওয়ামী লীগের দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতের এ দেশীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

৩. আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা।

৪. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা।#

এদিকে নেজামে ইসলাম পার্টি মঙ্গলবার একই ধরণের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে দলটির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার জানিয়েছেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন