সোমবার নেপালে তরুণদের নেতৃত্বাধীন জেনারেশন জেডের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। দুর্নীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে তরুণরা রাস্তায় নেমে এ আন্দোলনে যোগ দেন।
প্রথমে রাজধানীর নিউ বানেশ্বরে শুরু হলেও দিনভর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভরতপুর, ইতাহারি ও দামাকসহ অন্তত ১০ শহরে। সহিংসতা বাড়তে থাকায় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। জেন জেড (জেনারেশন জেড) একটি প্রজন্মগত পরিচয়। সাধারণভাবে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেয়ারা এই শ্রেণিভুক্ত। বর্তমান তরুণ সমাজের বড় অংশই এই প্রজন্মের। খবর কাঠমান্ডু পোস্টের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সুনসারির ইতাহারিতে গুলিবিদ্ধ দুই বিক্ষোভকারীও পরে মারা যান। এ নিয়ে সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯–এ।
এদিকে, দেশজুড়ে অন্তত ৩৪৭ জন আহত-গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন, ট্রমা সেন্টারে ৫৯ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ১০২ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ৩৭ জন, বীর হাসপাতালে ৬ জন, পতন হাসপাতালে ৪ জন, ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১৮ জনসহ অন্যত্রও অনেক আহত ভর্তি রয়েছেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এভারেস্ট হাসপাতালের ডা. অনিল অধিকারী জানিয়েছেন, সেখানে ৪ জন গুরুতর অবস্থায় আছেন। আর ট্রমা সেন্টারের ডা. দিপেন্দ্র পাণ্ডে জানিয়েছেন, অন্তত ১০ জন মাথা ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে সংকটজনক অবস্থায় আছেন।
নিউ বানেশ্বরের ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান, টিয়ারগ্যাস এবং সরাসরি তাজা গুলি ব্যবহার করে। একই ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখারা, বিরাটনগর, জনকপুর, হেতাউডা এবং নেপালগঞ্জেও।
সুনসারির ইতাহারিতে এক বিক্ষোভকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন, আরেকজন পরে হাসপাতালে মারা যান। ঝাপায় বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির দামাকের বাড়িতে পাথর ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক দফা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এছাড়া বিক্ষোভকারীরা পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত। কমিশন সহিংসতা ও অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
তরুণদের নেতৃত্বে আন্দোলন মূলত জেনারেশন জেড তরুণরা এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুর্নীতি ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে হাজারো শিক্ষার্থী ও যুবক সোমবার সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে আসেন।
এদিকে, বিভিন্ন জেলায় কারফিউ জারি করে সমাবেশ ও চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনা ও পুলিশ টহল জোরদার রয়েছে। হাসপাতালগুলো উপচে পড়া আহত রোগীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে