ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার

মো. আতিকুর রহমান মুফতি

সন্ধ্যা থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গভীর দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় চোখ-মুখ শুকিয়ে আসছে গৃহবধূ সুতপা মন্ডলের। বারান্দা ছুঁই ছুঁই পানি আরেকটু বাড়লেই ঢুকে পড়বে থাকার ঘরটিতে। টিউবওয়েল, টয়লেট, গরুর গোয়াল আর রান্নাঘর সবকিছুই পানিতে ডুবে আছে দেড় মাস হলো। কোন জায়গা না পেয়ে বারান্দার এক কোনায় অস্থায়ী মাটির চুলোয় ভাত বসিয়েছেন তিনি। তবে রান্নার চেয়ে বৃষ্টি পড়ার প্রতি তার নজর বেশি। স্বামী হরিহর মন্ডল এইমাত্র বাড়ি ফিরেছেন। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামে পাঁকা রাস্তার পাশে বাড়ি হলে ও উঠোন ভরা পানির উপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করতে হয়েছে ঘরে ওঠার জন্য। আজ বিকেলে সাঁকো থেকে পা-পিছলে পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল চার বছরের ছেলে সৌম্য। পাশের বাড়ির কৃষ্ণা বৌদি দেখা মাত্র ঝাঁপ দিয়ে সৌম্যকে তুলে আনেন বলে রক্ষা, না হলে যা হতে পারতো সেটা ভাবতে চান না সুতপা। গত বছর জলাবদ্ধতার সময়ে এ অঞ্চলে চারটি শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে। আবার এ সময়টিতে সাপ-সহ বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে, প্রাণ যায় অনেকের। আরো নিচু জায়গায় যাদের ঘরবাড়ি তারা বাড়ি ছেড়ে পাকা রাস্তার পাশে পলিথিন বা অস্থায়ী টিনশেড তৈরি করে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে গবাদিপশুর সঙ্গে গ্রামের অনেকের মতো সেখানে বসবাস করছেন তারা। ওখানেই চলছে তাদের রান্না-খাওয়া, রাতের ঘুম-সহ সংসারের সব কাজ। প্রকৃতপক্ষে, কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার অভাবে সেই আশির দশক থেকে ভবদহ এলাকার মানুষেরা প্রতিবছর একটু বেশি বৃষ্টি হলেই এমন অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।

মূলত, ষাটের দশকের উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হিমালয় বিধৌত এ বদ্বীপ অঞ্চল ছিল অসংখ্য নদ-নদী, উপনদী ও শাখানদী বেষ্টিত। হিমালয় থেকে সৃষ্ট পদ্মা নদীর মাধ্যমে বয়ে আসা পলি আর সুন্দরবনের জৈব বর্জ্য ভেসে এসে নিম্নভূমিতে অবক্ষেপিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এ বিশাল ভূ-ভাগ, যা এক সময়ে সাগরের নিচে নিমজ্জিত ছিল। জৈব ও পলিদ্বারা গঠিত খুবই উর্বর এ অঞ্চলে একপ্রকার বিনা চাষেই কৃষকরা আউশ ও আমনের আবাদ করত। তবে সে সময় কখনও বন্যা, কখনও লবণাক্ততা আবার কখনও জলোচ্ছ্বাসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতো। ১৯৫৪-৫৫ সালের ভয়াবহ বন্যার পর জাতিসংঘের সুপারিশে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বন্যা সমস্যা সমাধানে গঠিত হয় ত্রুগ মিশন, যাদের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৫৯ সালে পূর্ব-পাকিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ওয়াপদা) গঠন করে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওয়াপদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও লবণাক্ততা নিরসনে ‘উপকূলীয় বাঁধ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের আওতায় ‘অধিক ফসল ফলাও’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৬১ সালে যশোরের ভবদহ নামক স্থানে হরি নদীর উপর বাঁধ দিয়ে নদীর বাম দিকে ছয়টি ও ২১ টি এবং ডান দিকে নয়টি মোট ৩৬ টি স্লুইস গেট-সহ শুধু খুলনাঞ্চলেই মোট ৩৭টি পোল্ডার, চার হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ২৮২টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। বিলের অভ্যন্তরে মুক্তেশ^রী নদীর অববাহিকায় খালসমূহের মুখেও স্লুইস গেট দিয়ে পোল্ডার গড়ে তোলা হয়। ফলে প্রকল্প পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময় অঞ্চলে তিনটি ফসল আউশ, আমন ও বোরো ধান উৎপাদন হতে থাকে। মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এলেও অতিবৃষ্টির সময় স্লুইস গেট দিয়ে দ্রুত পানি নামতে না পারায় এলাকাটি প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসল ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করে। কর্তৃপক্ষ জানতো প্রকল্পটি সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ বছর কাজ করবে। তবে স্লুইসগেটগুলো সময়মতো ওঠানো-নামানোর অভাবে ১২-১৪ বছরের মধ্যে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়া শুরু করে, যা ৮০’র দশকে মারাত্মক আকার ধারণ করে। পোল্ডার নির্মাণের ফলে জোয়ারের পলিযুক্ত পানি বিলে প্রবেশ করতে না পেরে গেটের বাইরে নদীর তলদেশে পলি জমা হয় এবং একইসাথে গেটের ভিতরের বিস্তীর্ণ নিম্নঞ্চলের স্বাভাবিক ভূমি গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে থাকে।

অন্যদিকে, উজানে ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মায় পানিপ্রবাহ কমে শাখা নদীগুলো প্রবাহহীন হয়ে পড়ে। এক কালে, হরি ও শ্রী এবং ভবদহের স্লুইস গেটের অভ্যন্তরে থাকা মুক্তেশ্বরী নদীর সাথে ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা নদীর সংযোগ ছিল। পদ্মার শাখা মাথাভাঙ্গা নদী ভৈরবের একটি প্রবাহ মুখ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা তাদের চলাচলের সুবিধার্থে নৌকা ভর্তি মাটি ফেলে খরস্রোত মাথাভাঙ্গা কে শাসন করে। ফলে নদীটি স্রোতহীন হয়ে ভৈরবের নাব্যতাও হ্রাস পায়। পঞ্চাশের দশকে ভৈরবের অপর উৎস গঙ্গায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় করিমপুরের হাগনা গাড়ি নামক স্থানে (ভারত অংশে নাম জলাঙ্গী নদী) তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাঁধ দেয়ায় ভৈরব সম্পূর্ণভাবে গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর বাইরে ভৈরব নদকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন জায়গায় শাসন ও লিজ প্রদান, মৎস্যঘের, পাটা দিয়ে মাছ ধরা ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করায় সেটিও স্রোতহীন হয়ে পড়ে। ফলে ভবদহে উজানের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। কপোতাক্ষ নদ ও একই কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ নদের সাথে সংযোগ রয়েছে হরিহর, বেত্রাবতী, ভদ্রা, ইছামতি প্রভৃতি নদীর। মুক্তেশ্বরীতে উজানের পানি প্রবাহ না থাকায় পলিবাহিত জোয়ারের নোনা পানি ভূ-ভাগের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হামকুড়া, হরি, শ্রী, ভদ্রা, কপোতাক্ষ, বেত্রাবতী ও শোলমারী দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। হরি ও শ্রী নদীর তলদেশ বিলের তলদেশ অপেক্ষা উঁচু হয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে। ১৯৮৮ সালে যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর এবং খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। যশোর জেলায় ২১টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম ও আট লক্ষাধিক মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে পড়ে। যা পরবর্তী বছরগুলোতে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষেত্রবিশেষে অঞ্চলটির কোন কোনো এলাকা বছরব্যাপী স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে।

তখন এলাকার স্কুলকলেজ, বসতবাড়ি, অধিকাংশ রাস্তা ২-৩ ফুট কোথাও আরও বেশি পানির নিচে চলে যায়। ঘরে থাকা ধান-চাল-খাদ্যশস্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। ক্ষেতের ফসল, শাক-সবজি, ঘেরের মাছ, বাগানের ফল, গাছ-পালা সবকিছুরই ক্ষতি হয়। যেসব রাস্তায় পানি ওঠেনি সেখানে মানুষ তাদের গবাদি পশু ও হাঁসমুরগি নিয়ে আশ্রয় নেয়। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষের মাঝে ডায়রিয়া-কলেরা-আমাশয়ের প্রকোপ এবং দূষিত পানি শরীরে লেগে হাত-পায়ে ঘা, চুলকানি-সহ বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটে। এলাকার স্কুলকলেজ বন্ধ থাকাতে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রমে দারুণভাবে বিঘœ ঘটে। হাজার হাজার অশিক্ষিত-শিক্ষিত যুবক এ সময়ে সংসার চালাতে গিয়ে ঘাট শ্রমিক, মিল শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা-ভ্যান চালক, রাজমিস্ত্রী, মৎস্য শিকারের পেশায় নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়।

এ বছরও পানিতে ডুবেছে ভবদহ এলাকা। টানা বৃষ্টিতে যশোর সদর, অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার অন্তত ৫২টি গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে, তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। অনেক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যত্র ক্লাস নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে। খেলার মাঠে পানি থই থই করায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে খেলাধুলা থেকেও। যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান জানান, ভবদহ এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩৭ টি বিদ্যালয়, চারটি কলেজ ও আটটি মাদ্রাসা জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। আবার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম জানান, জেলায় সর্বমোট ৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এই তিন উপজেলার ভবদহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে স্বাভাবিক সময়ে ২৪ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হতো। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে গত বোরো মৌসুমে উপজেলা তিনটির আট হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে অভয়নগরে ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর, কেশবপুরে ২ হাজার ৫৭৮ হেক্টর ও মনিরামপুরে ৪ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমি ছিল।

ভবদহবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সরকারিভাবে বিভিন্ন স্থানে পাম্প বসিয়ে ও সময়ে সময়ে স্লুইস গেট খুলে দিয়ে এ অঞ্চলের পানি অপসারণের চেষ্টা চলমান রয়েছে। তবে ৫০ বছর মেয়াদি স্লুইস গেটগুলো নির্মাণের পর ৬০ বছর পার হওয়ায় স্থাপনাগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কারণে সব গেট একবারে খুলে দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। আবার, নদীর তলদেশ বিলের তলদেশ অপেক্ষা উঁচু হওয়ায় কোন কোন সময় পানি অপসারণে কেবল পা¤úের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে।

তবে আশার কথা হলো, সরকার ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবছে। এলক্ষ্যে গত ২২ এপ্রিল ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইস গেইট এলাকা পরিদর্শনকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, “ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে যে উপায়টি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর আমরা সে পথেই হাঁটবো। এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমান অর্র্ন্তবতীকালীন সরকার সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলবে। সাধারণ মানুষের ভাবনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু হবে।”

পরবর্তী সময়ে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবদহ সংকট সমাধানে গৃহীত উদ্যোগগুলো একে একে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আপার ভদ্রা, হরিহর, হরি, টেকা ও শ্রী নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সাথে এমওইউ হলেই কাজটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমডাঙ্গা খাল খননে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ কাজের দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হলেই কাজটি শুরু হবে। এর মধ্যে জিকরা খাল পর্যন্ত আমডাঙ্গা খালের ২.২ কিলোমিটার অংশ প্রশস্ত ও গভীর করে খনন ও খালের রেগুলেটর থেকে ভৈরব নদ পর্যন্ত ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও গভীর করে আরসিসি ইউ-ড্রেন নির্মাণ করা হবে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে ইউ-ড্রেনের উপর দুটি ছোট সেতু ও ড্রেনের দুই পাশে মানুষের চলাচলের জন্য পাঁচ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকবে।

আবার, ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইডেন থেকে কেনা হচ্ছে ওয়াটার মাস্টার মেশিন, যা একইসঙ্গে নদী খনন, পলি অপসারণ, ড্রেজিং এবং কচুরিপানা অপসারণ করতে সক্ষম। যেটি সারাবছর এই অঞ্চলেই থাকবে। এ সকল উদ্যোগের পাশাপাশি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন আর ও আটটি পাম্পের মাধ্যমে নিয়মিত ৩৫ কিউসেক পানি অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ভবদহে, অবশিষ্ট তিনটি কেশবপুর উপজেলার বিলখুকশিয়ার সাবস্টেশনে স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পে ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

তবে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের একটি বড় অংশ টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার) ব্যবস্থা চালু করা কে সমস্যার সমাধানের একটি উপায় মনে করেন। টিআরএম হলো মূল নদীর অববাহিকায় নির্বাচিত বিলে নদীর দিকে কিছু অংশ খোলা রেখে চারিদিক দিয়ে পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ করে বিলে জোয়ার ভাটা চালু করা। সমুদ্র থেকে জোয়ারের সাথে ভেসে আসা পলি কাটপয়েন্ট দিয়ে বিলে প্রবেশ করে অবক্ষেপিত হয়ে ভাটায় পানি দ্রুত নেমে যাবে। ফলে জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে পলি এসে বিলগুলো উঁচু হওয়ার পাশাপাশি নদীর নাব্যতাও বৃদ্ধি পেতে পারে।

এগুলো ছাড়াও, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে আরও কি করা যায় সে বিষয়ে সমীক্ষা চালাচ্ছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং নামের প্রতিষ্ঠান। তাদের সমীক্ষায় পাওয়া সমাধানের উপায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি দক্ষতা, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে ভবদহ অঞলকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। এরই মাধ্যমে মানুষ মুক্তি পাবে যুগ যুগ ধরে চলা ভোগান্তি থেকে।

লেখক : সহকারী তথ্য অফিসার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, খুলনা।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন