বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২
আটক হচ্ছে বহনকারী, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রাঘববোয়ালরা

সীমান্তপথে ফের বেড়েছে স্বর্ণপাচার

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

যশোরাঞ্চলে স্বর্ণ পাচারকারী চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এক বছর ঘাপটি মেরে থেকে চক্রটি গত আগস্ট মাস থেকে মাঠে নেমেছে। এ কাজে তারা যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তের চোরাপথ ব্যবহার করছে। গত এক মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের হাতে ৬৭টি সোনার বার উদ্ধার হয়েছে। যার মূল্য ২৩ কোটি টাকা। বর্তমানে নতুন আশ্রয়দাতার ছায়ায় থেকেই সিন্ডিকেটের নতুন সদস্যরা ভারতে দেদারসে স্বর্ণ পাচার করছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এ অঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট মুখ থুবড়ে পড়ে। অনেক রাঘব-বোয়ালরা গাঁ ঢাকা দেয়। তাদের সাথেই গোপন চুক্তির মাধ্যমে সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাচার কাজ চালিয়ে যেতো। কিন্তু আশ্রয়দাতারা না থাকায় যশোরাঞ্চলে স্বর্ণ পাচার ছিল না বললেই চলে। এরপর একবছর বিরতি দিয়ে তাদের জায়গা দখল করতে থাকে নতুন সিন্ডিকেট। বর্তমানে নতুন সিন্ডিকেটের সদস্যরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নতুন আশ্রয়দাতাদের ছায়া পেয়ে বিজিবিসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারসে ভারতে সোনার বার পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার চোরাপথ দিয়ে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ সোনা ভারতে পাচার করা হচ্ছে। এসব সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় গত এক মাসে বেশ কয়েকটি সোনার চালান বিজিবি সদস্যদের হাতে আটক হয়েছে। আর গত সপ্তাহে উদ্ধার হয়েছে ১৫টি সোনার বার। উদ্ধারকৃত স্বর্ণেরবারের সংখ্যা ৬৭টি। যার বাজার মূল্য ২৩ কোটি টাকা। তবে বিজিবির অভিযানে শুধু সীমান্ত এলাকা নয়, যশোর শহর ও শহরতলী থেকেও স্বর্ণসহ পাচারে জড়িতরা আটক হয়েছে।

গত ৭ আগস্ট চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুকুরের পানি ছেঁকে ২১টি স্বর্ণের বার উদ্ধার ঘটনায় হইচই পড়ে যায়। পাচারকারীর মোটরসাইকেল থামাতে গেলে বিজিবির ধাওয়া খেয়ে সে পাশের একটি পুকুরে ঝাঁপ দেয়, আর সাথে থাকা স্বর্ণেরবার পানিতে ফেলে দেয়। পরে পুকুরে পানি ছেঁচে স্বর্ণের বারসহ পাচারকারীকে আটক করা হয়। গত একমাসে এ জাতীয় অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ২৩ কোটি টাকা মূল্যের ৬৭টি সোনার বার।

এদিকে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত ভারতের সাথে দেশের যে ৩২টি জেলার সীমান্ত রয়েছে, এরমধ্যে যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এবং কুষ্টিয়া অন্যতম। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জীবননগর। আর যশোরের চৌগাছা, শার্শা, সাতক্ষীরার কলারোয়া, কালীগঞ্জ, সদর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, জীবননগর, মেহেরপুরের মুজিবনগর এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সাথে ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ খুবই সহজ। পরিবহণ ব্যবস্থাও ভালো। পাশাপাশি সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবাংলার রাজধানী কোলকাতাও খুব কাছে। সে কারণে পাচারকারীরা এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে সোনা চোরাচালানে তুলনামূলক একটু বেশি সক্রিয় থাকে। সূত্রের দাবি উদ্ধারের বাইরেও সীমান্তের বিভিন্ন চোরাচালান ঘাট ও চেকপোস্ট দিয়ে সোনারবার ভারতে পাচার হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে বহনকারী আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের রাঘব-বোয়ালরা। যার কারণে যশোরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সীমান্ত পথে যুগের পর যুগ ধরে চলছে স্বর্ণ পাচার। যা মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ অঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালান, উদ্ধার ও অভিযানের ব্যাপারে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেপ্টন্যান্ট কর্ণেল সাইফুল¬াহ্ সিদ্দিকী বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় স্বর্ণসহ পাচারকারী আটক ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বিজিবির বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানিক কার্যক্রম চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ কারণে তারা স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাচালানি মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন