খুলনায় সাংবাদিক ওয়াহিদ উজ জামান বুলুর আত্মহত্যার কারণ বের করতে পারেনি পুলিশ। তার মৃত্যুর পর পারিবারিক জটিলতার বিভিন্ন তথ্য সামনে আসছে। পুলিশের দাবি, স্বেচ্ছায় রূপসা সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি হত্যা বলে দাবি করা হচ্ছে।
এ দিকে গতকাল সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিক বুলুর মরদেহ প্রেসক্লাবে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে গোয়ালখালী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পরিবার, পুলিশ, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে সাংবাদিক বুলুর সাথে ঢাকায় থাকা ছোট ভাই আনিসুজ্জামান দুলুর শেষ কথা হয়। তখন তিনি তাকে বলেছিলেন ভালোই আছেন। পরেরদিন গত রবিবার বুলু নগরীর বাগমারা আদর্শ পল্লিতে তার শ্যালকের বাড়িতে নাস্তা করে সাড়ে ৯টার দিকে বের হন। এরপর থেকে তিনি কারও সাথে যোগাযোগ করেননি।
পারিবারিক অশান্তিতে ছিলেন সাংবাদিক বুলু। মানসিকভাবে দুর্বল ছিলেন তিনি। পারিবারিক কলহের কারণে তার প্রথম স্ত্রী এ বছরের ১১ মে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। যেটি তার মামা, ছোট ভাই ও দু’শ্যালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
পরিবারের একটি সূত্র জানায়, বছর খানেক আগে সাংবাদিক বুলু ডুমুরিয়ার তানিয়া সুলতানা নামের এক নারীকে সন্তানসহ বিয়ে করেন। তার কাছ থেকে এক লাখ টাকাও নিয়েছেন বুলু। সেই টাকাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সাথে বিরোধ হয় বুলুর। এরপর নগরীর শিববাড়ী মোড়স্থ বাড়িটি বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা পান বুলু। তখন দ্বিতীয় স্ত্রী লোকজন নিয়ে বুলুকে মারধরসহ নগদ মোটা অঙ্কের টাকা এবং ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা নিয়ে দুজনের মধ্যে তালাক হয়।
সাংবাদিক বুলুর ভাই আনিসুজ্জামান দুলু বলেন, “তানিয়া নামের এক মেয়ে বুলুকে স্ত্রী দাবি করেন। তার মানসিক নির্যাতনে বুলু অস্থির ছিল। কিন্তু আত্মহত্যার বিষয়টি আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। বুলুকে কেউ ধাক্কা দিয়ে সেতু থেকে ফেলে দিতে পারে।”
পিবিআই খুলনার পরিদর্শক কাজি মোস্তাক আহমেদ জানান, গত ৩০ জুলাই ওয়াহিদুজ্জামান বুলুর বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩ নং আদালতে মামলা করেন তানিয়া নামের এক নারী। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিলে গত ২৬ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান কাজে মোস্তাক। ওই দিন বিকালে তানিয়া পিবিআই কার্যালয় এসে দু’জনের মধ্যে মীমাংসার একটি আপোষনামা জমা দিয়ে যান। তানিয়া নামের ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
খুলনা নৌপুলিশের সুপার ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, সাংবাদিক বুলুর মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এই মৃত্যুটি আমরা আপাতত রহস্যজনক হিসেবে দেখছি। আমরা রূপসা সেতু ও তার আশপাশের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। এছাড়া উদ্ধারকৃত বুলুর মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর রহস্য উন্মোচন করা হবে।
শ্রদ্ধা ও দাফন : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে প্রয়াত সাংবাদিক বুলুর মরদেহ খুলনা প্রেসক্লাবে আনা হয়। পরে দুপুর ৩ টার দিকে প্রেসক্লাব সম্মুখ সড়কে তার নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ গোয়ালখালী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে প্রেসক্লাবে তার মরদেহে পুষ্পমাল্য অপর্ণ করে শেষ শ্রদ্ধা জানায়, খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেসক্লাব মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি, টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন।
উল্লেখ্য, সিনিয়র সাংবাদিক বুলু দৈনিক বঙ্গবাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ, চ্যানেল ওয়ান, ইউএনবি ও দৈনিক প্রবাহ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি খুলনা প্রেসক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম