Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ২১শে আগস্ট, ২০২৫ । ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

খেলাধুলা, ভ্রমণ আর ইতিহাসের সন্ধানে শহীদ আমান উল্লাহ্ হলের এক দিন

মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ

দিনটি ছিল শনিবার। খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার শহীদ আমান উল্লাহ্ হলের ৭৫ জন ছাত্র খেলাধুলা, ভ্রমণ আর ইতিহাসের সন্ধানে বের হয়। তাদের এই শিক্ষাসফরের যাত্রা শুরু হয় ভোর সাড়ে ছয়টায়। গাড়িযোগে রওনা হয় পিরোজপুরের আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন, বাগেরহাটের হযরত খান জাহান আলী (রহ.)–এর মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ ও চন্দ্রমহল ইকোপার্ক দেখা ও সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। যাত্রাপথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, খান জাহান আলী সেতু, বলেশ্বর ব্রিজ হয়ে গাড়ি ছুটে চলে পিরোজপুরের পথে। সোনালি রোদ, কখনো হালকা বৃষ্টি, মৃদু বাতাস, পাখির গান—সব মিলিয়ে যেন এক অপরূপ স্বর্গরাজ্যের হাতছানি। দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামী সংগীত, হাসির জোকসসহ নানান মজার আয়োজন।
প্রথমে পৌঁছায় খুলনা থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনে। সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা, রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য। ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট জেলে থাকাকালীন সময়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিনিয়ত দেশের নানান প্রান্ত থেকে মানুষ কবর জিয়ারত করতে আসেন। সেখানে পৌঁছে সকালের নাশতা শেষ করে শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১১টায় সেখান থেকে রওনা হয় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খান জাহান আলী (রহ.)–এর মাজারে। কোনো কোনো শিক্ষার্থী পায়ে হেঁটে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে পুকুরের চারপাশ ঘুরে দেখে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমার সময় খান জাহান আলীর মাজারে ওরস অনুষ্ঠিত হয় এবং লক্ষাধিক লোক তাতে সমবেত হয়। ২০০ বিঘা আয়তনের বিশাল এই দিঘিটি আধ্যাত্মিক সাধক, ধর্মপ্রচারক ও সমরনায়ক হযরত খান জাহান আলী খনন করেছিলেন। যাতে কেউ দীঘির সুপেয় পানি নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য দীঘিতে এক জোড়া মিঠা পানির কুমির ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
তপ্ত দুপুরে ঝলসানো রোদে শীতল পরশ খুঁজতে ব্যস্ত ভরাক্রান্ত মন নিয়ে শিক্ষার্থীরা যান প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের ষাট গম্বুজ মসজিদে। লাল পোড়ামাটির ওপর লতাপাতার অলংকরণে এর স্থাপত্য মোড়ানো। এর শৈল্পিক সৌন্দর্য মসজিদটিকে বিশেষ স্থান দিয়েছে। মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও এর গম্বুজের সংখ্যা আসলে ৭৭টি। মিনারের চারটি গম্বুজ যুক্ত করলে মোট গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১টি। গম্বুজগুলো ৬০টি স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলে ‘ষাট খাম্বা’ কালে কালে ‘ষাট গম্বুজ’ হয়ে উঠেছে। ছয় শত বছরের পুরোনো এই মসজিদটি ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।
মাদ্রাসার ছাত্র প্রতিনিধি আবু লাইচ বলেন, ‘শিক্ষা সফর খাতা-কলমের বাইরে হাতে-কলমের শিক্ষা। শিক্ষা সফর আমাদের মানসিক তৃপ্তি দেয়। আজকের দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তেজোদীপ্ত সূর্য যখন তার যৌবনের রূপ হারাতে শুরু করল, তখন সবাই রওনা হন বাগেরহাটের নির্মল বিনোদনের বিশ্বস্ত স্থান চন্দ্রমহল ইকোপার্কে। স্থানটি বাগেরহাট সদর উপজেলার রণজিৎপুর এলাকায় অবস্থিত। শিশুদের বিভিন্ন রাইডস, ওয়াকওয়ে, বিখ্যাত মনীষীদের প্রতিকৃতি, মাছ চাষের লেক, বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন ও ফল-ফুলের গাছ রয়েছে চন্দ্রমহলের চারপাশে। তবে সংস্কারের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য সেগুলো বন্ধ রয়েছে। তাছাড়াও তৈরি হচ্ছে নানান রকমের মৃৎশিল্প।
খুলনা গেজেট/এসএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন