Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার । ২১শে আগস্ট, ২০২৫ । ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

নোনা ইলিশ কবে খেয়েছি স্মরণ নেই !

মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ

খুলনা শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার রূপসা ঘাটের পূর্ব পাড়ের রাস্তার দুই পাশে রয়েছে কয়েকটি ছোট-খাটো অস্থায়ী দোকান। কোনোটি চায়ের দোকান, কোনোটি গৃহস্থালির ছোটখাটো নানান তৈজসপত্র। বিকেল গড়ালে যাত্রীদের সংখ্যাও বাড়ে। পরিবহন শ্রমিকেরা হাঁকডাক করে যাত্রী জোগাড় করছেন। এই হাঁকডাকের মধ্যেই ভেসে আসছে অন্য এক সুর- ‘ইলিশ নেন, নোনা ইলিশ। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়; খেতে মজা। এই আন্টি, মাছ লন। আসুন মাছ দেখুন।’

থরে থরে সাজানো নোনা ইলিশ। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়, দামও সাধ্যের মধ্যে। দু’টি গামলায় লবণ দিয়ে ফুলের মতো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পথচারী আর ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে নানা কৌশলে হাঁকডাক দিচ্ছেন বিক্রেতা। প্রতিপিছ ৫০০-৬০০ গ্রামের নোনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রামের নোনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

রূপসা ঘাটের পল্টুনের সামান্য দূরে একপাশে দাঁড়িয়ে দু’জন যুবক নোনা ইলিশ বিক্রি করছিলেন। এক ক্রেতাকে নোনা ইলিশ বুঝিয়ে দিতে দিতে অন্যদের ডাকছিলেন তারা। চাঁদপুর থেকে এই ইলিশ কিনে ১২ জনে মোট ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে খুলনার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তারা আসছেন এই ইলিশ বিক্রি করতে।

বর্তমান তরুণরা এই নোনা ইলিশের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নয়। গরম ভাতের সাথে এই মাছের রেসিপি বেশ সু-স্বাদু। রূপসা ফেরিঘাটের পাশেই পসরা সাজানো এই ইলিশের বেচা-কেনার হাঁকডাক। কেউ ঘ্রাণ শুকে দেখছেন আর কেউবা হাত বুলাচ্ছেন।

রূপসা উপজেলার বাসিন্দা ২১ বয়সী যুবক হেলাল হোসেন বলেন, নোনা ইলিশ সর্বশেষ কবে খেয়েছি স্মরণ নেই। তবে মাছগুলো দেখতে দূর থেকে বেশ ভালোই লাগছে, এজন্য এগিয়ে আসছি দেখতে।

দীর্ঘদিন পরে নোনা ইলিশ কিনে উচ্ছ্বসিত রূপসা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা সুরোজিত মন্ডল। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, এই ইলিশ খাতি বেশ মজা লাগে। সরিষা বাটা আর টমেটো দিয়ে রান্না করতি বলবো গিন্নিকে। এই মাছ সবসময় পাওয়া যায় না আমাগো রূপসায়, আজ পেয়েছি তাই দুইপিছ কিনেছি।

বেশ কিছুক্ষণ এসব দেখার পর কাছে যেতেই এই প্রতিবেদককে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বিক্রেতা আবির বললেন, বেচাকেনা খুবই কম, যা হয় তাতেই কোনো রকম সংসার চলে যায়।

কেন এই পেশায় আসা এমন প্রশ্নের জবাবে আবির বলেন,‌‌‍‌‌‌‍‌‌ ভাই বন্ধুরা দেখি এই ব্যবসা করছে। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনটাই কেটে গেছে এই ব্যবসায়, তাদের সাথে চলাচল করার সুবাদে আমিও এই ব্যবসায় যোগ দিয়েছি।

আবিরের সাথে ছিল তাঁর চাচাতো ভাই রকমাতুল্লাহ তিনি বলেন, এই ইলিশ আমরা চাঁদপুর থেকে কিনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। সাধারণত বৃষ্টির সিজনে মাছ একটু বেশিই বিক্রি হয়। কোন দিন ৫০০ টাকা, কোন দিন ৮০০ টাকা আবার কোন দিন হাজার টাকাও লাভ হয়।

এই দুই বিক্রেতা বলেন, চলতি ইলিশের মৌসুমে এই মাছ চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা মজুদ করে রাখে লবণ দিয়ে। মাছগুলো পরিষ্কার করে ডিমগুলো পেট থেকে বের করে, তারা এগুলো আড়তে উঠালে, আমরা এগুলো পাইকারি দরে কিনি। এ মাছগুলো লবণ দেওয়া অবস্থায় আমরা তিন মাস থেকে সাড়ে তিন মাস সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। এগুলো ১২ মাসই বিক্রি করি, বর্ষা-বাদলাই একটু বেশিই বিক্রি হয়। আমরা প্রায় ৫-৭ মাস ধরে এই ব্যবসা করছি। যদি যুতসই হয় আগামীদিনেও এই ব্যবসা চালিয়ে যাবো।

খুলন গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন