প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৫ জুলাই তারিখের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে এ বছরের বৃত্তি পরীক্ষায় শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিতে পারবে। এই পরিপত্র অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক, কিন্ডারগার্টেনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ৫ম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিতব্য বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন, খুলনা আঞ্চলিক শাখা।
‘জুলাই বিপ্লবের বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বেলা ১১ টায় খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন তুহিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, বৃত্তি শুধু একটি আর্থিক অনুদান নয় এটি একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস, সামাজিক স্বীকৃতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির অনুপ্রেরণা। যখন একটি শিশু দেখবে তার বন্ধুরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে কিন্তু সে নিতে পারছে না শুধুমাত্র তার বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির ধরণ ভিন্ন বলে, তখন তার মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শিশুদের মধ্যেই একটি বৈষম্যমূলক মনোভাব গড়ে তোলে, যা জাতীয় শিক্ষানীতির সাম্যের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, শিক্ষা শিশুদের মৌলিক অধিকার। কোন শিশুকে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান বৈষম্য বিরোধী সরকার। বর্তমান সরকারের সময়ে কিন্ডারগার্টেনের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আবার সেই বৈষম্যের শিকার হোক এটা অপ্রত্যাশিত।
ইকবাল হোসেন তুহিন বলেন, বিগত ১৭ জুলাই তারিখের পরিপত্রটি বাতিল করে অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষাসহ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গৃহীত অন্যান্য যেকোনো কার্যক্রমে প্রাথমিক শিক্ষায় অংশীজন হিসেবে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সমঅধিকার যেন অক্ষুন্ন থাকে তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দানের জোর দাবি জানাই।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন এর উপদেষ্টা বেগম রেহেনা আক্তার বলেন, এদেশে আন্দোলন হয়েছিল যে আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা চাই, কিন্তু একবছর পরে এসেও আমরা সেই বৈষম্যের শিকার হলাম। আমরা চেয়েছি সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা, বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা এবং আমরা যে সাধারণ যে শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের স্কুলগুলো চালায় সেগুলোতে যেন বৈষম্য না থাকে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন এর খুলনা অঞ্চলের সভাপতি শ্যামল কুমার রায় বলেন, সরকারের যারা এই বিভাগে কাজ করে আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম, তবে তারা বিভিন্ন অযুহাতে আমাদের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনায় আসেনি। এই সিদ্ধান্তটা আমাদের পূর্বে না জানিয়ে, আমাদের সাথে বৈষম্য করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৪২ হাজার দুইশত ২৮টি কিন্ডারগার্টেনের খুলনা অঞ্চলে ছয় লক্ষ শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত রেখে বৈষম্য করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারিকৃত পরিপত্রটি অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক কিন্ডারগার্টেনে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীদের ৫ম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিতব্য বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। এই দাবি ২৮ আগস্টের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে জেলা শিক্ষা অফিস ঘেরাও, বিভাগীয় উপপরিচালকের অফিস ঘেরাও এবং মার্চ ফর ঢাকাসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সাবেক চেয়ারপার্সন ও বর্তমান উপদেষ্টা বেগম রেহানা আখতার, সভাপতি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা অঞ্চল সভাপতি শ্যামল কুমার রায়, উপদেষ্টা এ্যড. কুদরত-ই-খুদা, আশরাফুল ইসলাম, নাসিমা রউফ, সহ-সভাপতি সারা চৌধুরী, তিথি দেবনাথ, সেলিম আজাদ, পবিত্র মল্লিক, শান্তুন, যুগ্ম সম্পাদক শাকিল আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদা ইসলাম, অর্থ-সম্পাদক মতিয়ার রহমান, শিক্ষা-সম্পাদক তৌফিক রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইরিনা আকরাম, দপ্তর-সম্পাদক ফরিদা সুলতানা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোজাফফর আহম্মেদ সহ খুলনা অঞ্চল কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া খুলনা অঞ্চলের প্রায় একশত কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/রহমাতুল্লাহ/এসএস