Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
বুধবার । ৬ই আগস্ট, ২০২৫ । ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content
জলাবদ্ধতা দূর হলেই বদলে যাবে ফকিরহাটের অর্থনীতি

কৃষি ও মৎস্য খাতে বাড়বে উৎপাদন, বছরে কমবে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

ফকিরহাট প্রতিনিধি

বছরের পর বছর ধরে বর্ষা এলেই ডুবে যায় বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা। সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে যেমন মানুষ হয় পানিবন্দি, তেমনি কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও নামে ধ্বংসের ছায়া। সংশ্লিষ্টদের মতে, সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকার উৎপাদন সম্ভব ফকিরহাটে।
প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা আর ব্যবস্থাপনার গাফিলতিতে তলিয়ে যায় জনপদ
বৃষ্টিপাতের সঙ্গে নদী-খালের নাব্যতা হ্রাস, অকেজো স্লুইসগেট, অপরিকল্পিত কালভার্ট এবং মাছ ধরার জন্য জাল-পাটা দিয়ে জলপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ডুবে যাচ্ছে নিচু এলাকা, ফসলের জমি, মাছের ঘের, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট।
মৎস্য খাতে কোটি টাকার ক্ষতি
ফকিরহাট উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখানে রয়েছে হাজার হাজার বাগদা, গলদা ও অন্যান্য মাছের ঘের। এর মধ্যে বহু ঘেরে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, অনেক ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গিয়ে মাছ ভেসে গেছে।
চাষিদের অভিযোগ, হঠাৎ করে জোয়ারের পানি এসে ঘের ডুবিয়ে দেয়। তাদের পুঁজি নেই আবার ঘের করার। ফলে অনেকে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
কৃষিতে ভয়াবহ চিত্র
জলাবদ্ধতায় চাষ করতে পারছেন না কৃষকেরা। ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বীজতলা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ফকিরহাট কৃষি অফিস বলছে, কেবল ১০টি অকেজো স্লুইসগেট মেরামত ও খাল পুনঃখনন করা গেলে ১,১৮৮ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত চাষ সম্ভব। উৎপাদন বাড়বে ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলে।
প্রাণিসম্পদ খাতও ক্ষতির মুখে
নিচু এলাকার খামারগুলোয় পানি উঠে গবাদিপশুর অসুখ-বিসুখ বেড়েছে। পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক খামারি গো-খাদ্যের জন্য চাষ করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা?
ফকিরহাটের প্রবীণ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী খান মাহমুদ আরিফুল হক আরিফ বলেন, “সঠিক উদ্যোগ নিলে কৃষিতে ১৫ কোটি, মৎস্যে ৩০ কোটি ও প্রাণিসম্পদে ৫ কোটি টাকার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।”
কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এই কয়েকদিনেই প্রায় ৩০ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। স্লুইসগেটগুলো ঠিক করা গেলে অন্তত ১০ কোটি টাকার ফসল রক্ষা করা সম্ভব।”
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুল্লাহ বলেন, “জলাবদ্ধতার কারণে ঘেরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। জাল-পাটা অপসারণে মাইকিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কাজ করছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আইরিন বলেন, “এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। ধাপে ধাপে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
ফকিরহাটের জলাবদ্ধতা আর শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়—এটি এখন অর্থনীতির বড় বাধা। এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন প্রশাসনিক আন্তরিকতা, সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এখনই না জাগলে হাতছাড়া হবে অপার সম্ভাবনার একটি জনপদ।
খুলনা গেজেট/এসএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন