খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলা

অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেলসহ তিন এটর্নি সাতক্ষীরায়

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তার গাড়িবহরে হামলার মামলা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শনিবার বিকালে সাতক্ষীরায় এসেছেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী বাপ্পি।

সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে রাত ৮ টায় এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। খোঁজ নেবেন মামলা সম্পর্ক। দেখবেন মামলার নথিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। সুপ্রিম কোর্টে আসামী রাকিবুর রহমানের পক্ষে দায়েরকৃত ক্রিমিনাল মিস মামলা ও হাইকোর্টের খারিজ আদেশ স্থগিতাদেশ সম্পর্কিত আবেদন খারিজ হওয়ার পর হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ি মামলাটি আগামি আড়াই মাসের মধ্যে কিভাবে শেষ করা যায় তা নিয়েও তাঁরা সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করবেন।

সাতক্ষীরায় আসার আগে দুপুরে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারল এসএম মুনীর ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেলদ্বয় গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ এবং সুজিত চ্যাটার্জী বাপ্পি কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার পিও পরিদর্শন করেন। এছাড়া তারা কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের ধর্ষণের শিকার মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর বাড়িতে যান। তার বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন। পরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও উপহার ধর্ষণের শিকার ওই নারীর হাতে তুলে দেন।

এদিকে এ মামলার ১৫ জন সাক্ষী দেওয়ার পর সোমবার (৩০ নভেম্বর) সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সাক্ষী দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে আরটিভি’র সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী ও সাতনদী পত্রিকার শহীদুল ইসলামকে। তাছাড়া কয়েকজন সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষণের শিকার স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। তাকে দেখে যশোর ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর তাঁর গাড়ি বহরে উপর হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উলে­খ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসম্বর ঘটনা মিথ্যে বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

নিম্ন আদালত বাদির পক্ষে রায় না হওয়ায় ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ম আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ম আদালত মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিলে পরবরর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উলে­খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলায় বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেমউদ্দিনসহ নয়জন সাক্ষী দেন। তবে বাদিকে জেরা করেনি আসামীপক্ষ। ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগষ্ট আসামীপক্ষ মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর উভয়পক্ষের শুনানীর পর আসামী পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ওই মামলাগুলি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ম আদালতকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি গত ৪ নভেম্বর মামলার বাদি মোসলেমউদ্দিন আদালতে সাক্ষী দেওয়ার জন্য হাজিরা দেন। ওইদিন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্ট ক্রিমিনাল মিস কেস খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন উলে­খ করে বলেন, চেম্বার জজ মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে ২২ নং ক্রমিক রেখে আগামি বছরের ৪ জানুয়ারি শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ সংক্রান্ত আইনজীবীর প্যাডে লেখা সনদ তারা আদালতে উপস্থাপন করেন। বিকালে বিচারক হুমায়ুন কবীর এ সংক্রান্ত শুনানী শেষে আসামীপক্ষকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মূল কপি উপস্থাপন ও বাদির সাক্ষীর জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ১৭ নভেম্বর ও ২২ নভেম্বর তারা সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশের কোন কপি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে ৩০ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়। একপর্যায়ে গত ২৪ নভেম্বর ক্রিমিনাল মিস কেস ও স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। ফলে মূল মামলার কার্যক্রম চলমান রাখতে আর কোন বাধা রইল না।

সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের দায়িত্বপালনকারি অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. অহিদুজ্জামান, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল ও দু’জন সহকারি এটর্নি জেনারেল সাতক্ষীরায় আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!