টানা পাঁচ মাস বন্ধ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ‘র শিক্ষা কার্যক্রম। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে উদ্বিগ্ন এবং হতাশাগ্রস্থ তাদের অভিভাবকরাও। সেই সমস্ত হতাশাগ্রস্ত এবং উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে একত্রিত হয়ে পাঁচ মাস বন্ধ থাকা কুয়েটের ক্লাস ও পরীক্ষা অতি দ্রুত শুরুর দাবিতে মানববন্ধন করে। কুয়েট গার্ডিয়ান ফোরাম এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
রবিবার (২০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে কেশবপুর আলিয়া মাদ্রাসার বায়োলজির সহকারি অধ্যাপক ও অভিভাবক রুবাইয়া হেজাজী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের সন্তানদের জীবন যেন নষ্ট করা না হয়। তারা খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা বিনীতভাবে করজোরে আপনাদের কাছে মিনতি জানাচ্ছি, আপনারা দয়া করে আপনাদের সন্তানতুল্য ছাত্রদের ক্ষমা করে দিয়ে তাদেরকে ক্লাসে ফিরিয়ে এনে এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় রাখার চেষ্টা করুন। তিনি আরো বলেন, নবীজির শিক্ষা কি ছিল? ভূল মানুষ করতেই পারে, কিন্তু নবীজি কি তাদের উপর প্রতিশোধ নিতেন? উনি সব সময় ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা শিক্ষক, আমরা যদি ছাত্রদের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে তাহলে আমাদের মর্যাদা কোথায় গেল? ছাত্ররা কি শিখবে আমাদের কাছ থেকে?
ময়মনসিংহ থেকে আগত অভিভাবক ও ময়মনসিংহ মহাকালী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক আয়েশা আক্তার মানববন্ধনে তার বক্তৃতায় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের আপনাদের কাছে পাঠিয়েছি। আপনারা আপনার সন্তানদের কথা যেভাবে চিন্তা করেন, আমাদের সন্তানদের কথাও সেভাবে চিন্তা করবেন। তারা অপরাধ করতেই পারে। ওরা হয়তো বেশি অপরাধ করে ফেলেছে। আপনাদের কষ্ট লেগেছে। ক্ষমা করার অযোগ্য হলে তাদের শাস্তি দেন। তবু ক্লাস বন্ধ রেখে তাদের আর শাস্তি দিয়েন না। আমরা বাবা মা ‘রাও খুব কষ্ট পাচ্ছি। ছেলেটাকে এখানে ভর্তি করে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। স্যারদের বলব, আপনাদের সন্তানদের মানুষ করতে কতটা কষ্ট পাচ্ছেন, সেসব বিবেচনা করে অতি সত্তর যে কোনো প্রকারে হোক ক্লাসে ফিরে যাওয়ার মত একটা পরিস্থিতি তৈরি করুন , সেটাই আপনাদের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ রইলো’
যশোর থেকে আগত যশোর কৃষি ব্যাংকের ডিজিএম ও অভিভাবক মোঃ এনায়েত করিম মানববন্ধনে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশব্যাপী কুয়েটের যে সুনাম এবং অবস্থান সেইগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের এখানে ভর্তি করেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সামান্য একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে পাঁচ মাস ক্লাস বন্ধ। তারা অত্যন্ত হতাশার মধ্যে আছে। পাঁচটা মাস তাদের জীবন থেকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তারা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অনেকের স্কলারশিপ বন্ধ করেছে, অনেক ছেলে মেয়ের বিয়ে বন্ধ করেছে। ক্ষতি অনেকটাই করেছেন, এখন আপনারা ক্লাসে ফিরে যান।
শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই কুয়েটকে আপনারা কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান? আপনারা না পারেন, বলে দেন, আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে চলে যাই। আরো অনেক কুয়েট আছে, রুয়েট আছে, চুয়েট আছে। আপনারা পর্যায়ক্রমে সেখানে তাদেরকে প্রোভাইড করেন, আর আপনারা বাড়িতে বসে ঘুমান। ইউনিভার্সিটিতে লেকচারগিরি করার দরকার নেই, প্রফেসারি করার দরকার নেই আপনাদের। আপনাদের কাছে শনিরবদ্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, গার্ডিয়ানদের পক্ষ থেকে, ছাত্রদের পক্ষ থেকে, ক্ষমা চাচ্ছি আমরা। আপনারা দয়া করে ক্লাসে ফিরে যান’।
মানববন্ধনে আব্দুল জলিল নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘কুয়েটকে আমরা ভালো মনে করতাম, আমরা ভালবাসতাম ,যে কারণে অনেক জায়গায় আমাদের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কুয়েটে ভর্তি করেছি। পাঁচটা মাস চলে গেল, কোন ক্লাস নেই। প্রত্যেক ছাত্র অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে যে গন্ডগোল তাতে গুটিকয়েক ছাত্র জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু তার জন্য সবাই ভুক্তভোগী হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। শুধু কুয়েট কর্তৃপক্ষ নয়, বর্তমানে যারা সরকারে আছে তারা এটার একটা দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটা আমাদের প্রত্যাশা। ছাত্রদের প্রধান অভিভাবক হচ্ছেন শিক্ষক। তাদের কাছে আমাদের সন্তানদের সপে দিয়েছিলাম। তারা তাদেরকে ভালোভাবে গাইড করবে, ভালো পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু এখানে দেখছি তার উল্টো।
শিক্ষক, কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ অনতিবিলম্বে এই দুরাবস্থা নিরসন করে অচিরেই তাদের ক্লাস শুরু করা হোক’।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ থেকে আগত মানিকগঞ্জ মমতাজ চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত মোহাম্মদ নায়েব আলী, ঢাকার ব্যবসায়ী উত্তম কুমার ঘোষ, খুলনা রেলওয়েতে কর্মরত দিলীপ কুমার সরকার, খুলনা এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে আগত শেখ মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের অফিস কক্ষে যেয়ে তাকে ক্লাস শুরু করার অনুরোধ জানান।
খুলনা গেজেট/এসএস