খুলনা, বাংলাদেশ | ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গোপালগঞ্জে কারফিউর সময় ফের বাড়লো
  তিন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
  গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ৩ জনসহ নিহত ৪
  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪
গোপালগঞ্জ এনসিপির কর্মসূচি

সরাসরি হামলার নির্দেশনা দেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম

গেজেট ডেস্ক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি পণ্ড করতে বিভিন্ন স্থান থেকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল এনসিপিকে ঢুকতে দেওয়া হলেও তাদের জীবিত বের হতে দেওয়া হবে না। বিশেষ করে শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা। এ মিশন সফল করতে স্বয়ং গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে মোবাইল ফোনে গোপালগঞ্জে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেন। এনসিপির বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিতে বেশকিছু অডিও বার্তাও পাঠান। এর সঙ্গে ভারতে পলাতক নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও এই ঘটনার সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি সরাসরি হামলা চালানোর নির্দেশনা দেন।

একটি অডিও বার্তায় শোনা যায়, শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালকে বলেন, ‘ওরা (এনসিপি) নাকি গোপালগঞ্জে যাচ্ছে। টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবার কবর ভেঙে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবার টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাবে। তোমরা বসে আছ কেন? যে যেভাবে পার প্রতিহত কর। গোপালগঞ্জে কোনোভাবেই যাতে ওরা ঢুকতে না পারে। কোনো ধরনের কর্মসূচি যাতে করতে না পারে। মনে রাখবা, গোপালগঞ্জের মাটি থেকে ওদের কেউ যাতে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে না পারে।’

আরেকটি অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও শহরের বেদ গ্রামের বাসিন্দা নিউটন মোল্লাকে বলেন, ‘তোমরা ওখানে (গোপালগঞ্জে) বসে কী কর। ওরা (এনসিপি) বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করছে। পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে লোকজন একত্রিত করে গোপালগঞ্জে ঢুকবে। এরপর টুঙ্গিপাড়ায় যাবে। যেভাবে পার ওদের প্রতিহত করতে হবে। টুঙ্গিপাড়ায় যাতে কোনোভাবেই ওরা ঢুকতে না পারে। আর যদি টুঙ্গিপাড়ায় ঢুকেই পড়ে, তাহলে একজনও যাতে জীবিত অবস্থায় ওখান থেকে ফিরে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পরদিন বুধবার গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক মাঠে এনসিপির কর্মসূচির দিন সকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বেই স্থানীয় চর দুর্গাপুর এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানান দেয় আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শহরের মোহাম্মদপাড়ার বাসিন্দা এই আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বেই পরে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে কয়েক দফা গুলি ও বোমা হামলা চালানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগই নয়, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথা বলেন। গোপালগঞ্জের মাটিতে এনসিপি যাতে কোনোভাবেই তাদের কর্মসূচি পালন করতে না পারে, সেজন্য প্রত্যেককে তিনি নির্দেশনা দেন। শেখ হাসিনার নির্দেশের পর এনসিপির কর্মসূচি পণ্ড করাসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে গোপালগঞ্জে থাকা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চতুর্দিক থেকে একযোগে হামলা চালান।

এ সময় নেতাকর্মীদের সমন্বয় করেন কলকাতায় থাকা শেখ হাসিনার ফুপাতোভাই গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লন্ডনে বসে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম কাজল। তাদের বাইরে গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলা-উপজেলায় আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। কলকাতায় আত্মগোপনে থেকেই ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি মাঠের কর্মীদের এনসিপির কর্মসূচিতে হামলা করতে নির্দেশনা দেন।

স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের এ কাজে সংগঠিত করেন কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম কাজলের স্ত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ইয়াসমিন আলম। যদিও বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে আটক করে। ১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় কর্মসূচি পালন করে দলটি। মাসব্যাপী এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে বুধবার ছিল গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন।

আগের দিন মঙ্গলবার দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কর্মসূচিকে ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। গোপালগঞ্জে কর্মসূচি পালন শেষে এনসিপির নেতাকর্মীদের শরীয়তপুরের জাজিরায় আরেকটি কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।

সূত্র : যুগান্তর।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!