খুলনা, বাংলাদেশ | ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান তালুকদার আর নেই
  ৩ ঘন্টা শিথিলের পর গোপালগঞ্জে পুনরায় কারফিউ চলছে

চেয়ারে শহীদদের মা-বাবা মেঝেতে ৫ উপদেষ্টা, শ্রদ্ধার অনন‌্য নজির

গেজেট ডেস্ক

জুলাই শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু সেখানে দেখা গেছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। মঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া পরিবারের স্বজনেরা। আর তাদের নিচে মঞ্চের মেঝেতে বসেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নগরীর হাজীগঞ্জ এলাকায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।

স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন শেষে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার বিচার পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। সেখানে কোনো গাফিলতি থাকবে না। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সরকারের শাসনামলেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।

শহীদ পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের মনে সবসময় একটা আর্তি থাকে, একটা ক্রন্দন থাকে— এত বড় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হলো, এমনভাবে আমাদের লোকদেরকে হত্যা করা হলো, আমাদের ভাইদের চোখ কেড়ে নেওয়া হলো, অঙ্গহানি করা হলো… জঘন্য, বীভৎস, নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার কোথায়? আমি আপনাদেরকে দৃঢ় কণ্ঠে জানাতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবেই।

এদিন আরও বক্তব্য দেন শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণভবনকে একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। ৫ আগস্টের আগে এটির উদ্বোধন করা হবে। এটা স্বৈরাচারের ঠিকানা। আমরা এই ঠিকানাকে সংরক্ষণ করতে চাই, দেখাতে চাই— এখানে ফ্যাসিবাদ কীভাবে মানুষকে অত্যাচার করত।

তিনি আরও বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছি শহীদদের সমস্ত কবরগুলো সংরক্ষণ করার জন্য। আমরা কাজগুলো শেষ করতে চাই। তবে সংগ্রামের ধারা শেষ করতে পারব না, এটা আপনাদের কাছে দিয়ে যাব। আপনারা অগ্নিযুগের সন্তান, আগুন হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বাংলাদেশে যেন কখনো কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি চোখ রাঙাতে না পারে। ফ্যাসিবাদ না আসতে পারে। আসার চেষ্টাও করা হলে সেটাকে দমন করা হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, বৈষম্যমুক্ত করেছে। তাদের ত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত দেশ পেয়েছি। এই জুলাইকে স্মরণ করে আজ আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। জুলাইকে আমাদের সবসময় স্মরণ করতে হবে।

তিনি জানান, এই নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন এবং বুলেটের সামনে সেদিন তারা বুক পেতে দিয়েছিলেন। আর এই ৫৬ শহীদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সন্তান ছিলেন ২১ জন। তাদের স্মরণে এবং তাদের পরিবার যে এত বড় আত্মত্যাগ করেছে, তা স্মরণে আজ নারায়ণগঞ্জে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদদের পরিবার, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!