‘আমার বাপেরে আমি আর পাব না, ও আল্লাহ একি হলো, তুমি একি করলে?’ এ কথা বলে ঘরের মেঝেতে বসে বারবার বিলাপ করছিলেন দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লার মা। অন্য ঘরে বসে একমাত্র বোন শান্তাও ভাইয়ের জন্য অঝোরে কাঁদছিল আর বলতেছিল ‘ওরে আল্লাহ একি হলো’? ফুফুর পাশে বসে মাহবুবের ছোট দুই মেয়ে জান্নাত ও মাওয়াও বাবার জন্য অঝোরে কাঁদতেছিল।
পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই সান্তনা দিয়েও মা, বোন আর দুই মেয়ের কান্না কিছুতেই থামাতে পারছিল না। কান্না আর আত্মচিৎকারে পুরো বাড়ির পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, শুক্রবার (১১ জুলাই) দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া শাহী জামে মসজিদে এলাকার সবাই যখন জুম্মার নামাজ আদায়ে ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন দুর্বৃত্ত বাড়ির সামনে এসে তাকে গুলি করার পর পায়ের রগ কেটে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এ সময় মাহবুব নিজ বাড়ির সামনে ভ্যানচালক সোলেমান (৩০)কে নিয়ে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন।
আরও পড়ুন: দৌলতপুরে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা
নিহত মাহবুব মোল্যার বাবার নাম করিম মোল্লা। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। দুই মেয়ে জান্নাত ও মাওয়া পল্লী তীর্থ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। ছোট ভাই মিজানুর রহমান মোল্লার ফুলবাড়িগেট স্টেশনারি ব্যবসার সঙ্গে সে সম্পৃক্ত ছিল। তবে সারাক্ষণ সে রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় সে দল থেকে বহিষ্কৃার হয়।
নিহত মাহাবুবের বোন শান্তা বলেন, ‘আমার ভাই দলের জন্য খুবই নিবেদিত প্রাণ ছিল। দলের জন্য শেখ হাসিনার আমল থেকে অনেক কষ্ট করেছে। দলের দুঃসময়ে সে সব আন্দোলনে গেছে। কেউ সামনে যায়নি, সে সামনে গেছে। মাইর খাইছে, গুলি খাইছে। দলের সুসময়ে এসে এখন এই হলো।’
হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আতাহার আলী খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে হাজির হই। আমরা আসার আগে জখমীয় অবস্থায় মাহবুবকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি। সাতটি পিস্তলের গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সন্দেহজনক কারা জড়িত থাকতে পারে এ ব্যাপারে একটি টিম কাজ করছে। একটি টিম অলরেডি অভিযানে আছে। একটা মোটরসাইকেলে তিনজন ছিল, একজন হেলমেট পরা। ঘটনাস্থল থেকে তারা তেলিগাতীর দিকে চলে যায় এমনটি শুনতে পারলাম। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের একটি টিম তেলিগাতি এলাকায় কাজ করতেছে। আশেপাশে কোথাও সিসি ক্যামেরা আছে কিনা আমরা দেখছি। সিসি ক্যামেরা থেকেও আসামি সনাক্তকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে সকল কার্যক্রম, সব রকমটা দিয়েই আমরা কাজ করছি। এই মুহূর্তে ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। সেটা নিয়ে আরেকটা টিম কাজ করতে পারলে আমরা আশানুরূপ রেজাল্ট পাব, তখন আপনাদেরকে বলতে পারব। আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। অচিরেই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তার করে একটা রেজাল্ট আপনাদের সামনে জানাতে পারব বলে আশা করি’।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিকালে দলীয় নেতা-কর্মীরা খুলনা- যশোর মহাসড়কের দৌলতপুর, রেলিগেট, কুলিবাগান, পালপাড়া মোড়ে টায়ারে জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে এবং দৌলতপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
খুলনা গেজেট/এএজে