খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪০৬
  কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও তার স্ত্রী সাবেক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত
  যুবদল নেতা হত্যা মামলায় সুব্রত বাইন ৭ দিনের রিমান্ডে

বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার শঙ্কা, ভোগান্তিতে হাজারো পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কোথাও কলাগাছে ভেলা, কোথাও আবার কক্সশিটে শিশু ও জিনিসপত্র নিয়ে যাতায়াত করছেন পানিতে আটকেপড়া লোকজন। এতে ভোগান্তিতে পৌর এলাকার হাজারো পরিবার।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় মোট ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হয়েছে ১০২ মিলিমিটার। অতিবৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডেও নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল্লারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, ঘের মালিকরা বিলে পানি আটকে রেখেছে। বাইপাসের স্লুইস গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি খাল দিয়ে নদীতে নামতে পারছে না। ফলে ঘরে-পথে সবখানে পানি।

বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ শাহানারা বেগম বলেন, ১০ বছর ধরে এমন হয়, কিন্তু কোনো সমাধান নেই। এবার রান্না ঘরে পানি ঢুকে হাঁড়ি-পাতিল নষ্ট। পোকামাকড় ঘরে ঢোকায় রাতে ঘুমাতে পারছি না। সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় থাকতে হচ্ছে।

শহরের কুখরালি এলাকার ইকরামুল হাসান বলেন, প্রভাবশালীরা বিলের মুখ বন্ধ করে মাছের ঘের করছে। তাদের কারণে শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ।

চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফসানা মিমি জানান, পানির কারণে সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষার দিন অন্য পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। পথে এসে আবার সেটি চেঞ্জ করা লাগে। বাড়ির টিউবওয়েল ডুবে গেছে, পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধারা সবচেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জন্মের পর থেকেই এই অবস্থা দেখছি । এই সমস্যা থেকে দ্রুত পরিত্রান পেতে চাই। এবিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

সমাজকর্মী সাজেদুল ইসলাম বলেন, নদী ও খাল খননে অনিয়ম হয়েছে। পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে, তাই বিলের পানি বের হচ্ছে না। বর্ষা হলেই বিলে পানি জমে গ্রামের ঘর বাড়িতে ঢুকছে। বর্ষাকাল এলেই এই সমস্যা দেখা দেয়। পৌর সভার নিম্নাঞ্চলে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার বিষয়টি জানা থাকলেও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীর।

বিশিষ্ট আইনজীবী ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, বছরের পর বছর ধরে সাতক্ষীরার মানুষ একই দুর্ভোগে পড়ে আছে। পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা শুধু নির্বাচনের সময় আসেন। এখন বলেন, সরকার পতনের পর ঠিকাদার পালিয়েছে, তাই কাজ হয়নি। নেটপাটা সরানো, স্লুইচ গেট সচল রাখা, প্রকৃত গভীরতা অনুযায়ী খাল খনন ও বাঁধ সংস্কার ছাড়া এই দুর্ভোগের সমাধান নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কিলোমিটার খাল ও সেচনালা সংস্কার করা হয়েছে। স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হবে এবং প্রাণসায়ের খালে পানি ফেলার ব্যবস্থা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সদরেরজলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে। আগামীতে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

জলাবদ্ধতার চাপে বিপর্যস্ত সাতক্ষীরাবাসী এখন টেকসই ড্রেনেজ পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের আশায় দিন গুনছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!