খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের কুঠিরচরে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
  বাংলাদেশে দেখা গেছে জিলহজের চাঁদ, পবিত্র ঈদুল আজহা ৭ জুন
  ৭৫ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও নির্বাচন আয়োজনের পথে মিয়ানমারের জান্তা
  সব মামলা থেকে দণ্ড ও সাজা মুক্ত হলেন তারেক রহমান
  চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে জুলাই আহত-স্টাফ সংঘর্ষ, সেবা বন্ধ

খুবি’র চার শিক্ষক ভাইস চ্যান্সেলর আ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনিত

আল মামুন, খুবি

খুলনা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের চারটি স্কুল থেকে চারজন শিক্ষক এবছর ভাইস চ্যান্সেলর আ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনিত হয়েছেন। আগামীকাল বুধবার (২৮ মে) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গবেষণগার ভবনের কনফারেন্স রুমে এক অনুষ্ঠা‌নে তাঁদের‌কে আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে এই আ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম ভাইস চ্যান্সেলর আ্যাওয়ার্ড প্রদান করবেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ খান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নূরুন্নবী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর গবেষণা, শিক্ষা ও নেতৃত্বে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষকদের ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এই পুরস্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফল।

এবছর যারা অ্যাওয়ার্ড পা‌চ্ছেন

ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস, ড. মো. নাসিফ আহসান, ড. আলোকেশ কুমার ঘোষ ও ইমতিয়াজ মাসরুর।

ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস

গণিত ডি‌সি‌প্লি‌নের প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব পোর্তো থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তাঁর ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাদান ও গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ৬টি বই, ১২টি অধ্যায় এবং ২৫০টির বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে তত্ত্বাবধান করেছেন।

তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে অপ্টিমাল কন্ট্রোল, গাণিতিক মডেলিং, পরিবেশ ও জীববিজ্ঞান বিষয়ক মডেল, সংক্রামক রোগের এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই ব্যবস্থাপনা। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ম্যাথমেটিক্যাল বায়োলজি (BSMB)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (২০২২–২০২৫) এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্য।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসমূহ :
# স্পেশাল কমেমোরেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ – শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য (ডুমুরিয়া-ফুলতলা ইউপিইউ শিক্ষার্থীবৃন্দ কল্যাণ সমিতি)
# আউটস্ট্যান্ডিং রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড ২০২২ – IEOM Society International
# ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ২০২০ – খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

ড. মো. নাসিফ আহসান

ড. মো. নাসিফ আহসান বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। তিনি জাপান, নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন, যা তাঁর বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও গবেষণার গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা :
পিএইচডি, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (পলিসি স্টাডিজ সহ), ন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (GRIPS), টোকিও, জাপান (২০১৬) এমএসসি, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ওয়াগেনিনজেন ইউনিভার্সিটি, নেদারল্যান্ডস (২০১০) বিএসএস (অনার্স), অর্থনীতি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৩)।

গবেষণা ও আগ্রহ :
তাঁর গবেষণার আগ্রহের মধ্যে রয়েছে ইকোসিস্টেম সেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, সামাজিক-পরিবেশগত ইস্যু এবং মাইক্রোইকোনমিক্স। ড. আহসান জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির (UDMC) নেটওয়ার্ক দক্ষতা মূল্যায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন, যা স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে তাঁর অবদানের ইঙ্গিত বহন করে।

একাডেমিক:
১. অধ্যাপক, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (জুলাই ২০১৬ – বর্তমান)

প্রশাসনিক :
১. ডিন, সমাজবিজ্ঞান স্কুল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (মার্চ ০৫, ২০২১ – মার্চ ০৪, ২০২৩)
২. প্রধান, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (মার্চ ০৩, ২০১৯ – মার্চ ০২, ২০২২)

গবেষণা সংক্রান্ত :
১. গবেষণা সহকারী, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওয়াটার হ্যাজার্ড অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ICHARM), সুকুবা, জাপান (অক্টোবর ২০১৩ – সেপ্টেম্বর ২০১৬)

প্রকাশনা ও সুপারভিশন :
ড. আহসান এ পর্যন্ত ৬০টি জার্নাল আর্টিকেল প্রকাশ করেছেন এবং ১৮টি গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন, যা শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর দীর্ঘদিনের অবদান ও গবেষণার প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ।

ড. আলোকেশ কুমার ঘোষ

প্রফেসর ড. আলোকেশ কুমার ঘোষ ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনে কর্মরত।

তাঁর উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও ফেলোশিপসমূহ :

# পি এম ফেলোশিপ – পিএইচডি গবেষণার জন্য (KU Leuven, বেলজিয়াম)।
# নেদারল্যান্ডস ফেলোশিপ প্রোগ্রাম (NFP) – এমএসসি অধ্যয়নের জন্য (Wageningen University, নেদারল্যান্ডস)।
# NSICT ফেলোশিপ – মাস্টার্স থিসিস গবেষণার জন্য (বাংলাদেশ সরকার)।
# একাধিক মেধা বৃত্তি – স্নাতক পর্যায়ে অসাধারণ ফলাফলের জন্য।

সংক্ষিপ্ত জীবনী :
ড. আলোকেশ কুমার ঘোষ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৯ সালে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০২৩ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজে বিএসসি (অনার্স) ও এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর নেদারল্যান্ডসের Wageningen University থেকে ‘অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে’ এ এমএসসি এবং বেলজিয়ামের KU Leuven থেকে সায়েন্সে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

গবেষণা আগ্রহ :
অ্যাকুয়াকালচার, প্রাকৃতিক যৌগের নির্যাস ও প্রয়োগ, চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ইমিউনোলজি।

বর্তমান গবেষণা প্রকল্পসমূহ :
# মসলা ভিত্তিক খাদ্য সম্পূরক ব্যবহার করে চিংড়ির বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি – প্রধান গবেষক,
# চিংড়ি চাষে খনিজ পুষ্টি ও প্রোবায়োটিকের সমন্বিত প্রভাব – প্রধান গবেষক,
# ক্ষুদ্র দেশীয় মাছের জিন ব্যাংক উন্নয়ন – সহ-গবেষক,
# মাড ক্র্যাবে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় ঔষধি উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়াশীলতা মূল্যায়ন – সহ-গবেষক।

তত্ত্বাবধানকৃত গবেষণা :
তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইমতিয়াজ মাসরুর

ইমতিয়াজ মাসরুর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের একজন প্রভাষক। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্সে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

গবেষণার ক্ষেত্র ও প্রকাশনা :
ইমতিয়াজ মাসরুরের গবেষণার প্রধান ক্ষেত্রগুলো হলো: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিকীকরণ, উদ্যোক্তার মানসিকতা, প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্ব এবং টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলন। তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাঁর গবেষণা উপস্থাপন করেছেন এবং ৪২টি উচ্চমানের জার্নালে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

পেশাগত অভিজ্ঞতা :
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে ড. মাসরুর নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনায় প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও, তিনি বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডে জোনাল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (BNCC)-এর মাধ্যমে যুব নেতৃত্ব উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসমূহ:
# প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক (২০১৮)
# রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক (২০১৯)
# ডিনস অ্যাওয়ার্ড (২০১৯) – বিবিএ ও এমবিএ উভয় ডিগ্রির জন্য তিনটি সুপারভিশনসহ এই পুরস্কার অর্জন করেন।

অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ড. আলোকেশ কুমার ঘোষ, “বলেন এটা আসলেই আমাদের জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া, যেহেতু প্রতিটি স্কুল থেকে একজন মনোনীত হন। এবার আমি মনোনীত হয়েছি বিষয়টি আমার জন্য আনন্দদায়ক স্মৃতি।”

শিক্ষকদের থিসিস তত্ত্বাবধান, গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ, সম্মেলনে গবেষণা উপস্থাপন, গবেষণা অনুদানের আবেদন, পাঠ্যক্রম তৈরি ও হালনাগাদ, এবং ইন্টার্নশিপ বা প্রজেক্ট তত্ত্বাবধানের মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হয়। প্রতিটি স্কুল থেকে প্রতি বছর একজন শিক্ষককে এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত করা হয়। একজন শিক্ষক একবার অ্যাওয়ার্ড পেলে পরবর্তী তিন বছরের জন্য মনোনীত হতে পারবেন না, তবে তিন বছর পর পুনরায় আবেদনের যোগ্য হন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!