ভারত থেকে দেশের দুটি সীমান্ত দিয়ে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৪৫ জন ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। আর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ২৪ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছে। ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৭৪ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেল।
কানাইঘাটের সনাতনপুঞ্জি সীমান্তে গতকাল ২১ জনকে আটক করে বিজিবি। ১৯ (জকিগঞ্জ) বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আটকদের মধ্যে চার নারী ও পাঁচ শিশু রয়েছে।
আটকদের মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার চন্দ্রকোনা গ্রামের আটজন, ধর্মপুর গ্রামের আটজন, নাটোরের লালপুর গ্রামের দু’জন, রাজশাহী সদরের কাজিহাটা গ্রামের দু’জন এবং চক রাজাপুরের একজন রয়েছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি ভারতের পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে বিএসএফের কাছে স্থানান্তর করে। গতকাল সকালে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়।
এদিকে, গত শুক্রবার রাতে ২৪ জনকে ফুলবাড়ী উপজেলার বালাতাড়ী সীমান্তের ৯৩২ নম্বর সীমানা পিলারের পাশে বিজিবির হাতে তুলে দেয় বিএসএফ। এর মধ্যে আট শিশু রয়েছে।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, তাদের বালারহাট বিওপির বিপরীতে ভারতীয় ৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের করলা ক্যাম্প ভারতে অভিবাসনপ্রত্যাশী কিছু নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করার জন্য জড়ো করা হয়েছে মর্মে বিজিবি খবর পায়। কাউকে পুশইন না করার জন্য বিএসএফকে বার্তা পাঠান বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম। বার্তায় বিএসএফকে জানানো হয়, প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশি নাগরিক হলে পরিচয় যাচাই করে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তাদের গ্রহণ করা হবে। কিন্তু কোনো অবস্থায় বাংলাদেশি নয় এমন কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফ প্রাথমিকভাবে ২৪ জনের নামের তালিকা বিজিবি ব্যাটালিয়নে পাঠায়। তালিকা যাচাই-বাছাই করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পতাকা বৈঠক ডাকা হয়।
পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষে ভারতীয় ৩ বিএসএফ ব্যাটলিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট এসএইচএল সিমতি এবং বিজিবির পক্ষে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক মেজর হাসনাইন নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাছেন আলী, ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম ও মহির উদ্দিন, বালারহাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে আটক বাংলাদেশিদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ সদস্যরা। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফেরত আসা ফুলবাড়ী উপজেলা দাসিয়ারছড়া সমন্বয়পাড়ার জসীমউদ্দীনের ছেলে তাজুল ইসলাম জানান, পরিবারের সাত সদস্যসহ হরিয়ানার ইটভাটায় সাত বছর ধরে কাজ করতেন তারা। কয়েক দিন আগে ভারতীয় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। ভয়ে দেশে ফেরার জন্য তিন দিন আগে বের হন। সীমান্তে ঘোরাঘুরির সময় বিএসএফের হাতে আটক হন।
এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক মেজর হাসনাইন জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২৪ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পঞ্চগড়ে ২১ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
এ ছাড়া পঞ্চগড় সীমান্তে পুশইন করা ২১ বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে থানা পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদের নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে চলে যান। গত বৃহস্পতিবার ভোরে সদর উপজেলার বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে এদের পুশইন করেছিল বিএসএফ।
ফেরত আসা এসব বাংলাদেশি নাগরিকের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া ও নড়াইলের কালিয়ায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গুজরাটে বসবাস করছিলেন। বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করতেন।
ভারত থেকে আসা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে ভারতে থেকে কীটনাশক কোম্পানিতে কাজ করতাম। এর মাঝে আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় ভারতীয় পুলিশ। পরে আমাকে আলাদা স্থানে ছেড়ে দেয়। স্ত্রী ও সন্তান সেখানেই ছিল। তাদের কোনো খবর নিতে পারিনি। হঠাৎ বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তাদের ছবি দেখি। এর পর পঞ্চগড়ের পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবারকে ফেরত পেয়েছি।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলম ছিদ্দিক বলেন, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা ও খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিন দিনের মাথায় তাদের অভিভাবক আসায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামান বলেন, আইনিভাবে আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের সবাইকে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় সদরের ইউএনও জাকির হোসেন বলেন, ‘পরিবারের সদস্য ও অভিভাবকরা এলে তাদের হস্তান্তর করা হয়।’
খুলনা গেজেট/এইচ