ভারতে মুসলিমদের প্রতি বিজেপি তথা মোদি সরকারের চরম ঘৃণা আর বিদ্বেষের জ্বলন্ত প্রমাণ আবারও সামনে এলো। মোদি তার ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহার করে অপারেশন সিঁদুরের ব্যাপারে যে মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে নিয়মিত ব্রিফ করিয়েছেন, সেই কর্নেল সোফিয়া কুরেশিই এখন বিজেপির টার্গেট। এই ভারতীয় মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে বিজেপির মন্ত্রী বিজয় শাহ অশ্লীল কটূক্তি করেছেন।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে সন্ত্রাসীদের বোন আখ্যা দিয়ে মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহ বলেছেন, আমাদের হিন্দু ভাইদের যেসব সন্ত্রাসীরা বিবস্ত্র করে পেহেলগামে হত্যা করেছিল, মোদিজি সেই সন্ত্রাসীদেরই এক বোনকে পাঠিয়ে ওদের উলঙ্গ করে শিক্ষা দিয়েছেন।
বিজেপির মন্ত্রীর এই মুসলিমবিদ্বেষী কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। তার এই বক্তব্যকে কট্টরপন্থি অনেক হিন্দু সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও দিচ্ছেন। তবে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ইউটিউবার ও সাংবাদিকসহ অনেকেই এর তীব্র সমালোচনা করছেন। তারা এ বক্তব্যের ব্যাপারে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি বিজয় শাহকে মন্ত্রীর পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিও তুলেছেন।
মধ্যপ্রদেশের এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা ও মন্ত্রী গত মঙ্গলবার রামকুন্ডা অঞ্চলে এক জনসভায় বলেন, ‘পেহেলগামে যেসব সন্ত্রাসী আমাদের বোনদের সিঁদুর মুছে দিয়েছিল, তাদের ঘরে ঢুকে জবাব দিতে সেই সন্ত্রাসী সম্প্রদায়ের এক বোনকে প্লেনে করে পাঠিছিলেন মোদিজি। ওরা আমাদের হিন্দু ভাইদের বিবস্ত্র করে হত্যা করেছিল। মোদিজি তাদের ঘরে ঢুকে জবাব দিয়েছেন। আমাদের বোনেদের বিধবা করেছিল ওরা, মোদিজি তাদেরই এক বোনকে পাঠিয়ে ওদের উলঙ্গ করে শিক্ষা দিয়েছেন।’
ওই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরপরই শুরু হয় সমালোচনা। কংগ্রেসের মধ্যপ্রদেশের সভাপতি জিতু পাতওয়ারি বিষয়টি নিয়ে তার এক হ্যান্ডেলে ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, বিজেপির এমন নিচু মানসিকতাকে কি দল সমর্থন করে? সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিজয় শাহের মন্তব্যকে অত্যন্ত অপমানজনক, লজ্জাজনক ও অশালীন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পেহেলগামের সন্ত্রাসীরা দেশকে বিভক্ত করতে চেয়েছিলে। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরে দেশ একজোট হয়ে তার জবাব দিয়েছে। তবে আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখছি এই অপারেশন সিদুঁর নিয়ে নৌবাহিনীর শহীদ কর্মকর্তার স্ত্রীকে ট্রল করা হয়েছে। এরপর পররাষ্ট্র সচিবের মেয়েকে করা হয়েছে হয়রানি। আর এখন সেনা কর্মকর্তা সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে বিজেপির মন্ত্রীর এই ঘৃণিত মন্তব্য। এটাই বিজেপি-আরএসএসের মানসিকতা।
শুভংকর মিশ্র নামে এক সাংবাদিক তার ইউটিউব চ্যানেলে নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা, মোদিজি লজ্জা। আপনার দলের নেতার বক্তব্য এখন সারা বিশ্বে প্রচার হচ্ছে। পাকিস্তানি মিডিয়াগুলো ফলাও করে প্রচার করছে এই বক্তব্য।
বিশ্বে ভারত সম্পর্কে কী বার্তা যাচ্ছে তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? কী ধরনের ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে আপনার দলের মাধ্যমে, তা ভেবে দেখুন। মুসলিমরা ভারতে প্রতিনিয়ত টার্গেটে পরিণত হয়- এই বয়ানকে সত্যি করতে চাচ্ছেন? সোফিয়া একজন মুসলিম, সেজন্যই তার সঙ্গে এই অপমানজনক আচরণ? মোদিজি আপনি যদি দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন, তাহলে বিজয় শাহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আর ব্যবস্থা না নিলে ধরে নেব আপনি দেশ নিয়ে ভাবেন না।
সংকেত উপাধ্যায় নামে আরেক সাংবাদিক বলেছেন, দেশের মধ্যে যখন ঐক্য প্রয়োজন, ঠিক তখনই মানুষের মনে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। বিজয় শাহ তার নেতার প্রশংসা করতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে অপমান করেছেন। বিজয় শাহ তো আটবারের বিধায়ক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মন্ত্রী। সুতরাং তার বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। মোদি সরকার তার ব্যাপারে কেন চুপ- এ প্রশ্ন এখন সবার।
এবিপি গঙ্গা লাইভ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে বিজয় শাহের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়- এই নেতা যা বলেছেন, তা তার উপরের নেতাদের কাছ থেকেই শিখেছেন। মুসলিমদের প্রতি তাদের ঘৃণারই প্রতিফলন এই বক্তব্য। সোফিয়া কোনো সন্ত্রাসীর বোন নন। সোফিয়া আমাদের সবার বোন হিসেবেই থাকবেন।
এতসব সমালোচনার পরও বিজয় শাহ তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কোনো প্রকার দুঃখ প্রকাশ না করে গণমাধ্যমের ওপর দায় চাপিয়ে বলেছেন, আমার বক্তব্য মিডিয়ায় সঠিকভাবে আসেনি।
খুলনা গেজেট/এনএম