বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে খুলনা দিবস পালিত হয়েছে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রশাসক ফিরোজ সরকার।
খুলনা দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা খুলনার সামগ্রিক উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বক্তারা খুলনার ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, খুলনার উন্নয়নের জন্য যে সকল দাবিসমূহ এখনো অপূরণীয় রয়েছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসি প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার বলেন, সামাজিক, অনৈতিক, সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে উন্নত খুলনা। আমার মনে হয় খুলনা আটটি বিভাগের মধ্যে এক নম্বর। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ ভবিষ্যতে সবাইকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এমন একটি সুন্দর আয়োজন করায় আমি সত্যি অভিভূত। এতো গরমের দিনেও আপনারা সবাই একত্রিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, কর্মসংস্থানের অভাব খুলনার অন্যতম সমস্যা। অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারলেই খুলনার প্রকৃত উন্নয়ন হবে। সাধারণ মানুষ জীবিকার তাগিদে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র এবং সিএনজি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। ফলে নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এক সময়ের শিল্প নগরী খুলনা আজ রিকশা-ইজিবাইকের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তিনি খুলনার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক বলেন, প্রতিটি মানুষের শপথ নেওয়া উচিত মি যদি ভালো কাজ নাও করতে পারি খারাপ কাজ না করি, খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকি। কাজকর্ম যেন দৃষ্টান্তমূলক হয়। খারাপ কাজ, খারাপ সংস্কৃতি, বাজে কাজ এসব থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে এই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নিজ জন্মভুমির মতোই খুলনাকে ভালোবাসি, খুলনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, খুলনা মহানগর বিএনপি সব সময় আপনাদের সাথে আছে। খুলনার উন্নয়নের প্রতিটা দাবিতে আমরা সোচ্চার ছিলাম, ভবিষ্যতে থাকবো। আমরা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাই, খুলনার যে দাবিগুলো আছে মিল-কলকারখানা চালু, গ্যাস সরবরাহসহ সকল দাবি ইনশাআল্লাহ আমার পূরণ করবো।
জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, খুলনা আজ মেরিন একাডেমি থেকেও বঞ্চিত। খুলনা অঞ্চল থেকে আমরা যত খাজনা-কর পরিশোধ করি, অন্য কেউ করে কিনা সেটা বিবেচনা করে দেখার বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের জন্য চীনের সাথে আলাপ-আলোচনা করে কয়েকটি হাসপাতাল করার চিন্তা করছেন। আমরা জানতে পেরেছি খুলনার জন্য একটি হাসপাতালের চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও জানতে পেরেছি এখান থেকে হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই খুলনাকে আর অবহেলার চোখে দেখবেন না। চীন যে হাসপাতাল বরাদ্দ করছে সেটা যেন খুলনাতে হয়। তা না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। ভোলা থেকে অবশ্যই গ্যাস খুলনায় আসতে হবে। খুলনার যে কোনো উন্নয়নে আমরা পাশে থেকে কাজ করবো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিববাড়ি মোড়ে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় সাইকেলিং, আদিম মানুষ, জেলে, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড, ব্যান্ড পার্টিসহ নানা সাজে সুসজ্জিত হয়ে মানুষ অংশ নেয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচিতে খুলনার প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, নগরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ দলমত নির্বিশেষে খুলনার সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান। সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল আলম তুহিন, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন হেলাল, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, প্রকৌশলী আজাদুল হক, অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা, খুলনা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শেখ নুরুল হাসান রুবা, খুলনা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক নবাব, আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মনিরুজ্জামান, সিপিবি নেতা এস এ রশীদ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান, শেখ মফিদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের খুলনা মহানগর সহ-সভাপতি শেখ নাসির উদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলন নেতা মুনির চৌধুরী সোহেল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনাকে জিলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। খুলনার অতীত ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে অতীত ও বর্তমানের সমন্বয়ের মাধ্যমে আগামী খুলনার সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে ২০০৯ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনে খুলনা দিবস পালিত হয়। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি এই দিনটিকে প্রতি বছর নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে আসছে।
খুলনা দিবস উপলক্ষ্যে উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে স্মরণিকা প্রকাশ, খুলনা মেজবানি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এছাড়া সন্ধ্যায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে